একটি আদর্শ কশেরুকার গঠন
একটি আদর্শ কশেরুকার সাতটি অংশ থাকে। এদের সকলের গঠন প্রায় একই রকম। তবে মেরুদণ্ডে অবস্থান ও কাজের ভিত্তিতে এদের গঠনে কিছু পার্থক্য থাকে। নিচে মানুষের একটি আদর্শ (বক্ষদেশীয় কশেরুকা)।কশেরুকার গঠন বর্ণনা করা হলাে:

সেন্ট্রাম (Centrum)
সেন্ট্রাম কশেরুকার মূলদেহ। এটি শক্ত, পুরু ও স্পঞ্জি অস্থিতে গঠিত। সেন্ট্রামের উভয় প্রান্তই অবতলবিহীন ও সমান। এ ধরনের সেন্ট্রামকে অ্যাসিলাস সেন্ট্রাম বলে।
নিউরাল নালি (Neural canal)
সেন্ট্রামের পৃষ্ঠীয় দিকে অবস্থিত নালিকে নিউরাল নালি বলে। এই নালি সুষুম্মাকাণ্ডকে ধারণ করে।
নিউরাল আর্চ (Neural arch)
নিউরাল নালিকে ঘিরে এক জোড়া চ্যাপ্টা পাতের মত অস্থি থাকে। এই অস্থিদ্বয়কে নিউরাল আর্চ বলে।
নিউরাল কাঁটা (Neural spine)
নিউরাল নালির পৃষ্ঠীয়দিকে নিউরাল আর্চ দুটোর সংযােগস্থলে একটি কাঁটার মত অংশ গঠিত হয়। একে নিউরাল কাটা বলে।
ট্রান্সভার্স প্রসেস (Transverse process)
কশেরুকার দু’পাশে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত অস্থি গঠিত প্রবর্ধিত অংশগুলােকে ট্রান্সভার্স প্রসেস বলে।
প্রি-জাইগাপােফাইসিস (Pre-zygapophysis)
নিউরাল আর্চের সামনের দিক থেকে চামচের মত আকৃতি বিশিষ্ট একজোড়া ছােট অস্থি থাকে যেগুলাে পূর্ববর্তী কশেরুকার পােস্ট জাইগাপােফাইসিসের সাথে যুক্ত থাকে।
পােস্টজাইগাপােফাইসিস (Post-zygapophysis)
প্রতিটি আদর্শ কশেরুকার নিউরাল আর্চের পিছনের দিক থেকে চামচের মত আকৃতিবিশিষ্ট একজোড়া ছােট অস্থি থাকে এদেরকে পােস্টজাইগাপােফাইসিস বলে। এগুলাে পরবর্তী কশেরুকার প্রি-জাইগাপােফাইসিসের সাথে যুক্ত থাকে ।
কশেরুকার প্রকারভেদ
দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানের ভিত্তিতে ৩৩টি কশেরুকাকে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
- (১) গ্রীবাদেশীয়(cervical) কশেরুকা-৭টি
- (২) বক্ষদেশীয় (thoracic) কশেরুকা-১২টি
- (৩) কটিদেশীয় (lumbar) কশেরুকা-৫টি
- (৪) শ্রোণিদেশীয়(sacral) কশেরুকা-৫টি (একীভূত)
- (৫) পুচ্ছদেশীয় (coccygeal)কশেরুকা-৪টি (একীভূত)।
পুচ্ছ অঞ্চলের ৪টি কশেরুকা একীভূত হয়ে যথাক্রমে ১টি স্যাক্রাম(sacrum) ও ১টি কক্কিক্স (coccyx) গঠন করে।

বিভিন্ন ধরণের কশেরুকার বর্ণনা
গ্রীবাদেশীয় (Cervical) কশেরুকা
এ অঞ্চলের প্রথম কশেরুকাকে অ্যাটলাস ও দ্বিতীয় কশেরুকাকে এক্সিম বলে। এসকল কশেরুকায় ট্রান্সভার্স প্রসেস ছােট এবং ট্রান্সভার্স ফোরামিনা নামক ছিদ্র থাকে।
বক্ষদেশীয় (Thoracic) কশেরুকা
বক্ষদেশীয় কশেরুকাগুলাে ও পশুকাগুলাে যুক্ত হয়ে বক্ষপিঞ্জর গঠন করে। বক্ষদেশীয় কশেরুকার গায়ে পর্শুকার সাথে সংযুক্তির জন্য ক্যাপিচুলাম ও টিউবারকুলাম নামক ফ্যাসেট বা সংযুক্তিস্থল থাকে।
কটিদেশীয় (Lumbar) কশেরুকা
এই কশেরুকাগুলাে বেশ বড় ও মজবুত এবং এর আর্টিকুলার ফ্যাসেটগুলাে বৃহদাকৃতির হয়। এদের ট্রান্সভার্স প্রসেসও বৃহদাকার হয়।
শ্রোণিদেশীয় (sacral) কশেরুকা
শ্রোণিঅঞ্চলের ৫টি স্যাক্সাল কশেরুকা একত্রে মিলিত হয়ে স্যাক্রাম নামক ত্রিকোণাকার বৃহদাকারে যৌগিক অস্থি গঠন করে। স্যাক্রামের প্রতি দু’টি কশেরুকার মধ্যস্থলে একজোড়া করে আন্তঃকশেরুকা ছিদ্র থাকে। এদের মাধ্যমে সুষুম্মাস্নায়ু বের হয়
পুচ্ছদেশীয় (Coceygeal) কশেরুকা
মানুষের মেরুদণ্ডের শেষ ৪টি কশেরুকা অবিচ্ছেদ্যভাবে মিলিত হয়ে একটি বৃহদাকার ত্রিভুজাকৃতির অস্থিখণ্ড গঠন করে যাকে কক্কিক্স বলে।