- অর্জিত ইমিউনিটি বা অর্জিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
- অর্জিত ইমিউনিটির প্রকারভেদ
- সক্রিয় ইমিউনিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য
- নিষ্ক্রিয় ইমিউনিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য
অর্জিত ইমিউনিটি বা অর্জিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
যেসব ইমিউনিটি সহজাত নয়, জন্মের পর দেহে রােগ জীবাণু প্রবেশের ফলে সৃষ্টি হয় তাদের অর্জিত ইমিউনিটি বলে।
এ রকম ইমিউনিটি প্রাণীর জন্মের পর অর্থাৎ প্রাণির জীবদ্দশায় অর্জিত হয়। কোনাে ক্ষতিকর অণুজীব কিংবা ক্ষতিকর পদার্থের প্রভাবে বা অন্য কোনাে কারণে দেহে এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়।
অর্থাৎ দেহের প্রয়ােজনে যে ইমিউনিটি আবির্ভাব ঘটে সেটাই হচ্ছে অর্জিত ইমিউনিটি।
অর্জিত ইমিউনিটির প্রকারভেদ
অর্জিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আবার নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়-
১। নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমের ওপর ভিত্তি করে অর্জিত ইমিউনিটির প্রকারভেদ
কোষনির্ভর ইমিউনিটি বা কোষ নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি
দেহের যে ইমিউনিটি T-লিম্ফোসাইট বা T- কোষের সাহায্যে ঘটে তাকে কোষভিত্তিক ইমিউনিটি বলে। এ ধরনের অর্জিত ইমিউনিটি T-শ্রেণির লিম্ফোসাইট সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অনুপ্রবিষ্ট রােগ জীবাণু ধ্বংস করে।
লােহিত মজ্জা থেকে T-লিম্ফোসাইট সৃষ্টিকারী কোষ থাইমাস গ্রন্থিতে প্রবেশ করে T-লিম্ফোসাইটে পরিণত হয় এবং লসিকাগ্রন্থিতে আশ্রয় লাভ করে। দেহে অ্যান্টিজেন প্রবেশ করলে তাকে ম্যাক্রোফেজ গ্রাস করে। T-লিম্ফোসাইট ম্যাক্রোফেজযুক্ত অ্যান্টিজেনকে গ্রহণ করে এবং লিস্ফোকাইনিন এনজাইমের সাহায্যে তাদের ধ্বংস করে।
খ, রসভিত্তিক ইমিউনিটি বা হিউমােরাল ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডি নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি
দেহে যে অনাক্রম্যতা B-লিম্ফোসাইটের B-কোষ এর সাহায্যে ঘটে তাকে রসভিত্তিক ইমিউনিটি বলে। B-লিম্ফোসাইট এ ধরনের ইমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত। রক্তে অ্যান্টিজেন প্রবেশ করার পর B-লিম্ফোসাইট তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়। অ্যান্টিজেনের প্রভাবে B-লিম্ফোসাইট কোষ ব্লাস্ট কোষে পরিণত হয় এবং ব্লাস্ট কোষ থেকে প্লাজমা কোষ তৈরি হয়। প্লাজমা কোষ অ্যান্টিবডি বা ইমিউনােগ্লোবিউলিন সৃষ্টি করে।
২। সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে অর্জিত ইমিউনিটির প্রকারভেদ
সক্রিয় বা প্রত্যক্ষ ইমিউনিটি (Active immunity)
মেরুদণ্ডী প্রাণিদেহে (যেমন- মানুষ) এমন কিছু ব্যবস্থা থাকে, যা দেহে জীবাণু অনুপ্রবেশের পরে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে জীবাণু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ ধরনের প্রতিরােধ ব্যবস্থা সক্রিয় ইমিউনিটি অন্তর্ভুক্ত। এই অনাক্রম্যতার পরিচায়ক হচ্ছে T-লিম্ফোসাইট দ্বারা জীবাণু দমন কিংবা B-লিম্ফোসাইট কর্তৃক অ্যান্টিবডি ক্ষরণের মাধ্যমে জীবাণু দমন। এ ইমিউনিটি আবার দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।যথা-
১। প্রাকৃতিকভাবে লব্ধ সক্রিয় ইমিউনিটি (Naturally acquired active immunity)
আমাদের দেহে কোনাে রােগের জীবাণু প্রবেশ করলে তা অ্যান্টিজেন নামক পদার্থের প্রভাবে রক্তের T ও B-লিম্ফোসাইট সক্রিয় হয়ে ওঠে। সক্রিয় লিম্ফোসাইটগুলাের প্রভাবে ফ্যাগােসাইটোসিস (phagocytosis) প্রক্রিয়ায় জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিহত হয়। তাছাড়াও সক্রিয় লিম্ফোসাইটগুলাের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মৃতিকোষ (memory cell) সৃষ্টি করে। যেগুলাে রক্তের মধ্যে দীর্ঘদিন মজুদ থাকে ও ভবিষ্যতে আগের মতাে জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে তাদের সহজে ও দ্রুত দমন করে ফেলে।
২। কৃত্রিম উপায়ে লব্ধ সক্রিয় ইমিউনিটি (Artificially acquired active immunity)
এ রকম ইমিউনিটি প্রতিষেধক প্রয়ােগ দ্বারা (vaccination) সৃষ্টি করা যায়। ভ্যাক্সিন (vaccine) বা টিকা হলাে নিষ্ক্রিয় জীবাণু বা অ্যান্টিজেন(attenuated antigens) দেহে ভ্যাক্সিন প্রয়ােগ করলে, নিষ্ক্রিয় জীবাণু বা অ্যান্টিজেন কোনাে রােগ সৃষ্টি করতে পারে না,কিন্তু অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে দেহের T ও B-লিম্ফোসাইট সক্রিয় হয়ে ওঠে ও বিশেষ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরােধমূলক সব ব্যবস্থাই জেগে ওঠে।
সক্রিয় ইমিউনিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য
- দেহে সরাসরি সক্রিয়ভাবে উৎপন্ন হয়।
- সক্রিয় ইমিউনিটির প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
- এ ধরনের ইমিউনিটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি উৎপাদনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পরে উপশম ঘটে।
- এ ধরনের ইমিউনিটিতে কোনাে পার্শ্বীয় প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
নিষ্ক্রিয় বা পরােক্ষ ইমিউনিটি (Passive immunity)
এই প্রতিরক্ষা প্রাণী নিজ দেহে সক্রিয়ভাবে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি না করে জীবাণু দমনের জন্য অন্য কোনাে প্রাণী থেকে অ্যান্টিবডি লাভ করে। এ ধরনের অনাক্রম্যতা দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
১। প্রাকৃতিগতভাবে লব্ধ পরােক্ষ/নিষ্ক্রিয় ইমিউনিটি (Artificially acquired passive immunity)
মাতৃগর্ভে শিশুঅমরার (placenta) মাধ্যমে মাতৃদেহ থেকে অ্যান্টিবডি (IgG) অর্জন করতে পারে ও এর সাহায্যে অপরিণত শিশু জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরােধে সক্ষম হয়। এটা ছাড়াও শিশু মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে (বিশেষতঃ কলােস্ট্রামের মাধ্যমে) IgG জাতীয় অ্যান্টিবডি প্রাপ্ত হয়। এটা শিশুর দেহে জীবাণু দমনে সহায়তা করে।
২। কৃত্রিম উপায়ে লব্ধ পরােক্ষ ইমিউনিটি (Artificially acquired passive immunity)
এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কৃত্রিম উপায়ে অন্য প্রাণীর দেহে রােগ জীবাণু প্রবেশ করিয়ে অনেক ক্ষেত্রে রােগ জীবাণু প্রতিরােধের জন্য প্রতিষেধক (vaccine)তৈরি করা হয়।
এই প্রতিষেধক দ্বারা মানবদেহে রােগ সংক্রমণ প্রতিরােধ করা যায়। এ প্রতিরােধ ব্যবস্থার উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জলাতঙ্ক প্রতিরােপ্রে জন্য অ্যান্টিব্যাবিজ (antirabies) প্রতিষেধকের ব্যবহার।
সাম্প্রতিক সময়ে অধিক শক্তিশালী, নিরাপদ ও উন্নত প্রতিষেধক (vaccine) তৈরির চেষ্টা চলছে।
যার একটি সাফল্য হচ্ছে- কৌশল প্রয়ােগের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ভাইরাসের (hepatiites virus) সফল ভ্যাকসিন প্রস্তুত।
নিষ্ক্রিয় ইমিউনিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য
- যে ইমিউনিটি দেহের বাইরে থেকে কোনাে উপাদান দেহে প্রবেশ করিয়ে সৃষ্টি করা হয়, তাকে নিষ্ক্রিয় ইমিউনিটি বলে।
- নিষ্ক্রিয় অনাক্রম্যতার প্রভাব স্বল্পস্থায়ী।
- এ ধরনের অনাক্রম্যতায় পার্শ্বীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।অর্জিত অনাক্রম্যতাতন্ত্রের প্রধান কাজ: মেরুদন্ডী প্রাণিদেহে অর্জিত অনাক্রম্যতাতন্ত্রের প্রধান কাজগুলাে হলাে-
- বিশেষ কোষের মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরােধ করা।
- একদা সংক্রমিত নির্দিষ্ট জীবাণুকে মনে রাখা ও পরবর্তীকালে সেই জীবাণুর আক্রমণকে প্রতিহত করা।
- জীবাণুর ভবিষ্যৎ আক্রমনের জন্য দেহকে প্রস্তুত রাখা।