কঙ্কাল
প্রাণিদেহের সবচেয়ে শক্ত অংশ যা দেহের কাঠামো তৈরি করে এবং ভার বহন করে তাকে কঙ্কাল বলে।
কঙ্কালতন্ত্র
ভ্রূণীয় মেসােডার্ম স্তর থেকে সৃষ্ট অস্থি, তরুণাস্থি ও লিগামেন্ট এর সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্র দেহের কাঠামাে সৃষ্টি করে, নির্দিষ্ট আকার আকৃতি দান করে, ভার বহন করে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদি সুরক্ষিত রাখে, তাদেরকে একত্রে কঙ্কালতন্ত্র বলে।
কঙ্কালতন্ত্রের কাজ
- কঙ্কাল দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদানে সহায়তা করে এবং দেহের মজবুত কাঠামো গঠন করে।
- পেশী, লিগামেন্ট. ট্যানডন ইত্যাদির আটকানোর কাজ করে।
- অস্থিসন্ধি গঠনের মাধ্যমে এটি চলাচলে সাহায্য করে।
- কঙ্কাল দেহকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সহায়তা করে।
- ভ্রূণাবস্থায় থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত কঙ্কালের মজ্জা বিভিন্ন প্রকার রক্তকণিকা তৈরি করে। এই কারণে অস্থিসমূহকে রক্ত উৎপাদনের কারখানা বলা হয়।
- দেহের অভ্যন্তরীণ সকল চাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন কের।
- মস্তিষ্ক, সূষুম্নাকাণ্ড ও দেহগহ্বরের অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং নরম অঙ্গসমূহকে বাইরের তাপ, চাপ, রাসায়নিক ও যান্ত্রিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করে থাকে।
- দেহে আয়নিক সমতা আনয়ন করে থাকে।
মানব কঙ্কালতন্ত্রের প্রধান অংশসমূহ
মানব কঙ্কালতন্ত্র ২০৬টি অস্থির সমন্বয়ে গঠিত এবং এ ধরনের কঙ্কালতন্ত্রকে অন্তঃকঙ্কাল বলে। কারণ বাইরে থেকে এ কঙ্কাল দেখা যায় না।
মানব কঙ্কালতন্ত্রের প্রকারভেদঃ মানুষের কঙ্কালতন্ত্রকে প্রধান দুটি অংশে ভাগ করা হয়। যথা-
- (১) অক্ষীয় কঙ্কাল (Axial skeleton)
- (২) উপাঙ্গীয় কঙ্কাল (Appendicular skeleton)
এছাড়াও কঙ্কালতন্ত্রের দুটি প্রকার আছে যেমন- অন্তঃকঙ্কাল(অস্থি ও তরুনাস্থি) ও বহিঃকঙ্কাল (নখ,চুল,দাত) মানবদেহের ২০৬টি অস্থির হিসাব-
অক্ষীয় কঙ্কাল
কঙ্কালতন্ত্রের যে অস্থিগুলাে দেহের অক্ষ রেখা বরাবর অবস্থান করে কোমল, নমনীয় অঙ্গগুলােকে ধারণ করে ও রক্ষা করে এবং দেহ কাণ্ডের গঠনগুলাে সংযুক্ত করে অবলম্বন দান করে তাদের একত্রে অক্ষীয় কঙ্কাল বলে। অক্ষীয় কঙ্কাল প্রধানতঃ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (ক) করােটি, (খ) মেরুদণ্ড ও (গ) বক্ষপিঞ্জর।
করােটি (skull) :
মাথার কঙ্কালিক গঠনকে করােটি বলে। করােটিতে মােট ২৯টি অস্থি থাকে। মুখমণ্ডলীয় ও করােটিকার অস্থি সমন্বয়ে গঠিত।
করােটিকা (Cranium)
করােটির যে অংশ মস্তিষ্ক আবৃত করে রাখে তাকে করােটিকা বলে। করােটিকা ছয় প্রকারের মােট আটটি অস্থি নিয়ে গঠিত।
টেমপােরাল ২টি, ফ্রন্টাল ১টি, অক্সিপিটাল ১টি, টেম্পোরাল ২টি, এথময়েড ১টি, স্ফেনয়েড ১টি

মুখমণ্ডলীয় অস্থি (Facial bones)
করােটিকার সামনের ও নিচের দিকের অংশকে মুখমণ্ডল বলে। সর্বমােট ১৪টি অস্থি নিয়ে মুখমণ্ডল গঠিত। মুখমণ্ডলীয় অস্থিসমূহ হলাে ১ জোড়া ম্যাক্সিলা, ১ জোড়া জাইগােম্যাটিক অস্থি, ১ জোড়া নাসিকা অস্থি, ১ জোড়া ল্যাক্সিমাল অস্থি, নাসাগহব্বরের দু’পাশে দুটি ন্যাসাল ও দুটি প্যালাটাইন অস্থি, ১টি ম্যাণ্ডিবল (১টি ভােমার; প্রতি কর্ণে ৩টি করে মােট ৬টি ও জিহ্বার গােড়ায় হাইওয়েড নামে একটি পাতলা অস্থি গণনার বাইরে)। এ সকল অস্থিসমূহ সুসজ্জিত হয়ে মুখমণ্ডলের কাঠামাে গঠন করে এবং চোখ, কান, নাকসহ মুখগহ্বরের সৃষ্টি করে।
মেরুদণ্ড (Vertebral column)
অ্যাটলাস অস্থি থেকে কক্কিক্স অস্থি পর্যন্ত বিস্তৃত দণ্ডাকৃতির যে গঠন মানব দেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ গঠন করে তাকে মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়া বলে।
৩৩টি অসম আকৃতির সীমিত সঞ্চালনক্ষম অস্থিখণ্ডক সমন্বয়ে মেরুদণ্ড গঠিত। এ সকল অস্থিখণ্ডককে কশেরুকা (vertebra) বলে। মানুষের কশেরুকা অ্যাসিলাস ধরণের। কশেরুকাগুলাে কোমলাস্থি নির্মিত চাকতি দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে। স্থির অবস্থায় বা চলমান অবস্থায় এটি দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
বক্ষপিঞ্জর (Thoracic cage)
বক্ষদেশীয় ১২টি কশেরুকার সঙ্গে ১২ জোড়া পর্শুকা যুক্ত হয়ে যে খাঁচার মত আকৃতি গঠন করে তাকে বক্ষপিঞ্জর বলে। এই খাঁচার ভেতরের গহ্বরকে বক্ষগহ্বর বলে। এই গহ্বরে হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস অবস্থান করে। বক্ষপিঞ্জর পর্শুকা ও স্টার্ণাম দিয়ে গঠিত।
স্টার্নাম

দু’পাশের পর্শুকাগুলাে স্টার্নাম নামক অস্থির সাথে যুক্ত থাকে। বুকের কেন্দ্রীয় সম্মুখ অংশে অবস্থিত চাপা অস্থিটির নাম স্টার্নাম। এটি ৩টি অংশে বিভক্ত। যথা- উপরের ত্রিকোণাকার ম্যানুব্রিয়াম, মাঝের লম্বা দেহ এবং নিচের ক্ষুদ্র জিফয়েড প্রসেস। স্টার্নাম বুকের খাঁচার সামনের অংশ গঠন করে।
পর্শুকা (Ribs)
পর্শুকাগুলাে লম্বা, সরু, চ্যাপ্টা ও বাঁকা অস্থি। মানবদেহে ১২ জোড়া পশুকা থাকে। পর্শুকার পশ্চাৎপ্রান্তে ফ্যাসেটবাহী মস্তক, ক্রেস্টবাহী গ্রীবা, সংযােগী তলসহ টিউবাকল এবং বাঁকানাে দেহ নিয়ে গঠিত। পশুকার সম্মুখ প্রান্ত তরুণাস্থিময়।ফ্যাসেটের সাহায্যে পর্শুকা সংশ্লিষ্ট কশেরুকার সাথে যুক্ত থাকে। পর্শুকাগুলােকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- (ক) প্রকৃত পশুকা- বক্ষদেশীয় কশেরুকা থেকে উৎপন্ন ১ম ৭ জোড়া পশুকাই প্রকৃত পশুকা।
- (খ) অপ্রকৃত পশুকা- বক্ষদেশীয় ৮ম, ৯ম ও ১০ম কশেরুকা থেকে উৎপন্ন ৩ জোড়া পশুকাই অপ্রকৃত পশুকা।
- (গ) ভাসমান পশুকা- ১১শ ও ১২শ বক্ষদেশীয় কশেরুকা থেকে উৎপন্ন হয়ে ভাসমান অবস্থায় থাকে বলে এ ২ জোড়া পর্শুকাকে ভাসমান পশুকা বলে।
বক্ষপিঞ্জরের কাজ : হৃৎপিন্ড, ফুসফুস প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বক্ষপিঞ্জরের ভেতরে সুরক্ষিত থাকে।