এইডস (AIDS: Acquired Immune Deficiency Syndrome)
AIDS হলাে Acquired (অর্জিত) Immune(ইমিউন বা রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা) Deficiency (ডেফিসিইয়েন্সি বা হ্রাস) Syndrome (সিনড্রোম বা অবস্থা) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। অর্থাৎ বিশেষ কারণে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমে যাওয়াকে এইডস (AIDS) বলে । Human Immune Deficiency Virus, সংক্ষেপে HIV নামক ভাইরাস দ্বারা এ রােগ সৃষ্টি হয়।
HIV ভাইরাসের আক্রমণে মানুষের শ্বেত রক্ত কণিকার ম্যাক্রোফেজ ও T4 লিম্ফোসাইট ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এতে দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য রােগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যায়। বর্তমান বিশ্বে AIDS একটি মারাত্মক রােগ।
২০০০ সালে বিশ্বে HIV আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ, এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ৩০ লক্ষ । আফ্রিকার দেশসমূহে HIV র আক্রমণ বেশি লক্ষ করা যায়। ধারণা করা হয় বানরের দেহে এ ভাইরাসটি ছিল যা সর্বপ্রথম আফ্রিকায় বানর থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হয় এবং পরে তা আমেরিকা, ইউরােপ তথা সমগ্রবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এইডস(AIDS) রোগের বিস্তার
বিভিন্ন উপায়ে এইডসের ভাইরাস একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন- নারী পুরুষের অস্বাভাবিক ও অসামাজিক যৌন আচরণ, সংক্রমিত সিরিঞ্জ ব্যবহার, সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ, সংক্রমিত মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণকারী শিশু, সেলুনে একই ব্লেড বা ক্ষুর বিভিন্ন জনে ব্যবহার করা, দন্ত চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা গ্রহণকারী ইত্যাদি।
এইডস(AIDS) রোগের লক্ষণ
এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত রােগীর শ্বেত রক্ত কণিকা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। ফলে রােগীর দেহ ধীরে ধীরে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা হারাতে থাকে এবং নিচে বর্ণিত লক্ষণগুলাে প্রকাশ পেতে থাকে –
- প্রাথমিক অবস্থায় দেহে জ্বর আসে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বর দীর্ঘায়িত হয়।
- দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে যায় এবং শরীর শুকিয়ে যায় ও ওজন কমতে থাকে।
- পেটে ব্যথা হয় এবং খাবারে অনীহা সৃষ্টি হয়।
- ফুসফুসে জীবাণুর আক্রমণ ঘটে এবং বুকে ব্যথাসহ শুষ্ক কফ জমে।
- অস্থি সন্ধি সমূহে প্রচণ্ড ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং দেহে জ্বালা পােড়া হয়।
- শ্বাস কষ্ট, জিহ্বায় সাদা স্তর জমা, ত্বকের মিউকাস ঝিল্লি বা যে কোন ছিদ্র থেকে রক্তপাত, ঘন ঘন ফুসকুড়ি,সার্বক্ষণিক মাথা ব্যথা এবং ক্রমশ স্মৃতি শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়।
- সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রােগী যক্ষ্মা, নিউমােনিয়া, ডায়রিয়া, অন্ধত্ব প্রভৃতি একাধিক রােগে আক্রান্ত হয়ে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা হারিয়ে পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে।
এইডস এর লক্ষণ নারী- পুরুষে প্রায় এক রকম হলেও নারী দেহে কতকগুলাে বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-
- যােনিতে দীর্ঘস্থায়ী বা অনিরাময়যােগ্য ঈষ্টের সংক্রমণ।এ সংক্রমণ সুস্থ নারীদেহে দ্রুত সেরে যায়।
- জনন তন্ত্রের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ জনিত প্রচণ্ড জ্বালা পােড়া ও ব্যথা সৃষ্টি হয়।
- জরায়ু গাত্রে হিউম্যান প্যাপিলােমা ভাইরাস (HPV) এর আক্রমণে টিউমার হওয়া এবং পরবর্তীতে সারভিক্স ক্যান্সারে রুপ নেওয়া আরেকটি লক্ষণ।
এইডস(AIDS) রোগ প্রতিরােধের উপায়
এইডস প্রতিরােধে নিচে বর্ণিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
- নিরাপদ যৌন সঙ্গম করা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি মেনে চলা। অনিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।
- যৌন মিলনে কনডমের ব্যবহার এবং এইডস থেকে রক্ষায় এর ভূমিকা সম্পর্কে গণ সচেতনতা সৃষ্টি করা।
- এইডস এর ভয়াবহতা সম্পর্কে রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা, বিলবাের্ড, পােষ্টার ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা।
- ইনজেকশন গ্রহণের সময় ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার না করা এবং শিরার মাধ্যমে কোন ড্রাগ গ্রহণ না করা।
- সেলুনে একটি ব্লেড একবারই ব্যবহার করা।
- সংক্রমিত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রেখে চিকিৎসা প্রদান করা।
- পতিতাদের নিরাপদ যৌনতা সম্পর্কে সচেতন করা।
- প্রতিবার মিলনকালে কনডম ব্যবহার করা প্রভৃতি।
- সতর্কতার সাথে নিজের শারীরিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখা।
এইডস(AIDS) রোগের চিকিৎসা
এইডসের চিকিৎসায় ৩ শ্রেণির ওষুধ প্রয়ােগ করা হয়। যথা- রােগের প্রাথমিক পর্যায়ে HIV র প্রতিলিপিকরণ ঠেকাতে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইমকে বাধা দিতে Nucleoside analogue Reverse Transcriptase Inhibitors (NRTIs) প্রয়ােগ করা হয়। কিন্তু এ ওষুধে অস্থিমজ্জা সহ শারীরিক অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। Non-Nucleoside analogue Reverse Transcriptase Inhibitors (NNRTIs) ওষুধ খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে রােগী ওলটপালট স্বপ্ন দেখে, সবসময় নিদ্রালু থাকে প্রভৃতি।
HIV এর জীবন চক্রের শেষ পর্যায়ে HIV Protease এনজাইমের কাজে বাধা দিতে Protease Inhibitors (PIS) জাতীয় ওষুধ প্রয়ােগ করা হয়। তবে জানা গেছে, HIV সংক্রমণ প্রতিরােধে কোন ভ্যাক্সিন আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।