ক্রোমােসােম এর ভৌত ও রাসায়নিক গঠন। ক্রোমোজোমের কাজ।

ক্রোমােসােম

ক্রোমােসােম নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রধান বস্তু। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্যানুসারে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমােসােম থাকে। আদি কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকাতে তাতেকোন সুগঠিত ক্রোমােসােম থাকে না। তবে এদের কোষে বিশেষ ধরনের নিউক্লিয়াে দ্রব্য প্রাে-ক্রোমােসােম বা আদি ক্রোমােসােম মুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। বিশেষ রঞ্জক ব্যবহার করে আলােক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বিভাজনরত কোষে ক্রোমােসােম দেখা যায়। 

আবিষ্কার

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রাসবুর্গার (Strasburger) ক্রোমােসােম আবিষ্কার করেন তবে তিনি এর নামকরণ করেননি। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওয়ালডেয়ার(Waldeyer)ক্রোমােসােম’ (Chroma-রং, Some-ধারণ) শব্দটি ব্যবহার করেন।

সংখ্যা

প্রজাতির বৈশিষ্ট্যভেদে ক্রোমােসােমের সংখ্যা ২ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত হয়। পুষ্পক উদ্ভিদে সর্বনিম্ন সংখ্যক ক্রোমােসােম পাওয়া গেছে Happlopappus gracilis, 2n = 4 এবং সর্বাধিক সংখ্যক Poa litarosa, 2n: 506-530। প্রাণীতে সর্বনিম্ন Ascaris megalocephala, 2n = 2 এবং Olacantha sp., 2n = 1600।

আয়তন ও আকৃতি

প্রতিটি ক্রোমােসােমের একটি সুনির্দিষ্ট আয়তন থাকে। প্রজাতি অনুসারে ক্রোমােসােমের দৈর্ঘ্য সাধারণত ০.২৫-৫০ মাইক্রোমিটার এবং ব্যাস ০.২-২.০ মাইক্রোমিটার হয়। মানবদেহের ক্রোমােসােমের গড় দৈর্ঘ্য ৪-৬ মাইক্রোমিটার হয়।

অবস্থান

নিউক্লিয়াসে থাকে। কখনও কখনও নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপ্লাজমেও থাকতে পারে।

ভৌত গঠন

কোষ বিভাজনের মেটাফেজ পর্যায়ে ক্রোমােসােম অত্যন্ত সুগঠিত থাকে। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃষ্ট একটি আদর্শ ক্রোমােসােমের প্রধান অংশগুলাে সংক্ষেপে নিচে বর্ণনা করা হলাে-

ক্রোমাটিড

মেটাফেজ দশায় ক্রোমােসােম লম্বালম্বিভাবে দুটি সুতার ন্যায় অংশে বিভক্ত থাকে যাকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা সংযুক্ত থাকে।

সেন্ট্রোমিয়ার

সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমােসােমের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা ক্রোমাটিড দুটিকে সংযুক্ত রাখে। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানটি ক্রোমােসােমে একটি খাঁজের সৃষ্টি করে। এ খাঁজকে মুখ্য কুঞ্চন বলে।

ক্রোমােসােম এর ভৌত ও রাসায়নিক গঠন। ক্রোমোজোমের কাজ।

কাইনেটোকোর

সেন্ট্রোমিয়ারের মধ্যে বহির্মুখী বিপরীত দিকে অবস্থিত গােলাকার বস্তুই কাইনেটোকোর। কোষ বিভাজনের সময় কোষের বিপরীত মেরু থেকে আগত স্পিন্ডল তন্তু এসে কাইনেটোকোরের সাথে সংযুক্ত হয়।

বাহুমুখ্য কুঞ্চনের

উভয় দিকের লম্বা অংশদ্বয়কে ক্রোমােসােমের বাহু বলে। বাহু দুটি দৈর্ঘ্যে সমান বা অসমান হতে পারে।

গৌন কুঞ্চন

সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া কোন কোন ক্রোমােসােমের বাহুতে এক বা একাধিক গৌন কুঞ্চন থাকতে পারে।

ক্রোমােমিয়ার

মায়ােটিক কোষ বিভাজনের প্রােফেজ দশায় ক্রোমাটিডের গায়ে ছােট ছােট গুটিকার ন্যায় যে বস্তু দেখা যায় তাকে ক্রোমােমিয়ার বলা

পেলিকল

ক্রোমােসােমের দেহ একটি পর্দা দ্বারা আবৃত বলে ধারণা করা হয়। একে পেলিকল বলে।

ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স

পেলিকল দ্বারা আবৃত তরল অংশকে ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স বলে। তবে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ম্যাট্রিক্স ও পেলিকলের অস্তিত্ব দেখা যায়নি বলে আধুনিক কোষ বিজ্ঞানীগণ ক্রোমােসােমে এগুলাের উপস্থিতি অস্বীকার করেন।

স্যাটেলাইট

গৌন কুঞ্চনের পর ক্রোমােসােমের খুব ছােট গােলাকার অংশকে স্যাটেলাইট বলে। ইহা ক্রোমােসােমের প্রান্তের দিকে থাকে। টেলােমিয়ার প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এইচ.জে.মুলার (H.J.Muller)ক্রোমােসােমের প্রান্ত টেলােমিয়ার নামক একটি বিন্দুর অবস্থান কল্পনা করেন। তিনি ধারণা করেন টেলােমিয়ারের অবস্থানের কারণে ক্রোমােসােমের দুটি প্রান্ত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না। টেলােমিয়ার একটি ক্রোমােসােমের অখন্ডতা রক্ষা করে।

ক্রোমােসােমের রাসায়নিক উপাদান

ক্রোমােসােমের প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলাে-

(ক) নিউক্লিক অ্যাসিড ও (খ)প্রােটিন।

(ক) নিউক্লিক অ্যাসিড

ক্রোমােসােমে দু’ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যথা- DNA এবং RNA।

(খ) প্রােটিন

প্রােটিন হলাে ক্রোমােসােমের মূল কাঠামাে গঠনকারী রাসায়নিক উপাদান। এ কাঠামােতে নিউক্লিক অ্যাসিডগুলাে বিন্যস্ত থাকে। ক্রোমােসােমে প্রােটিনের পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগ।

ক্রোমােসােমে দু’ধরনের প্রােটিন পাওয়া যায়। যথা- হিস্টোন ও নন হিস্টোন।উল্লিখিত উপাদান ছাড়াও ক্রোমােসােমে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লিপিড, আয়রন, এনজাইম এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান খুব অল্প পরিমাণে থাকে।

ক্রোমােসােমের কাজ

  • ১। ক্রোমােসােম বংশগতির বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারক ও বাহক। এ কারণে এরা বংশ পরম্পরায় জীবের বৈশিষ্ট্য ধারণ, বহন ও স্থানান্তর করে।
  • ২। বিভক্তির মাধ্যমে কোষ বিভাজনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
  • ৩। সেক্স ক্রোমােসােম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • ৪। ক্রোমােসােমে অবস্থিত বংশগতির বাহক জিন, জীবের ব্লু-প্রিন্ট হিসেবে কাজ করে।

Leave a Comment