গনােরিয়া (Gonorrhea) রোগ কী?
গনােরিয়া একটি সাধারণ যৌনবাহিত রােগ। সমগ্র বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন লােক এ রােগে আক্রান্ত হয়। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই মারা যায়। তবে এ রােগ থেকে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। মহিলাদের থেকে পুরুষরা এ রােগে বেশি আক্রান্ত হয়।
গনোরিয়া রোগের কারণ ও সংক্রমণ
Neisseria gonorrhoeae নামক ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে গনােরিয়া রােগের জন্য দায়ী। N.gonorrhoeae নারীর জনন নালি (সারভিক্স, জরায়ু, ফেলােপিয়ান নালিসহ) এবং নারী ও পুরুষের ইউরেথ্রার মিউকাস ঝিল্লিতে সংক্রমণ ঘটায়। মুখ, গলা, চোখ ও পায়ুর মিউকাস ঝিল্লির এ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। গনােরিয়া আক্রান্ত লােকের সাথে কেবল যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এক দেহ হতে অন্যদেহে স্থানান্তরিত হয়।
গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াও নারী-পুরুষ উভয়ে বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। সংক্রমিত বিছানার চাদর বা তােয়ালে থেকে শিশুরা এরােগ দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে। ঘন বসতি এবং অপরিচ্ছন্নতা থেকে বাচ্চাদের গনােরিয়া হতে পারে।
গনোরিয়া রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
পুরুষদের ক্ষেত্রে গনোরিয়ার লক্ষণ
১০-১৫% পুরুষ উপসর্গহীন অবস্থায় থাকে। যাদের উপসর্গ দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে-
- প্রস্রাবের যন্ত্রণা, প্রস্রাবের তীব্র আকাঙক্ষা, ঘন ঘন প্রস্রাব করা। পরবর্তীতে মূত্রনালি দিয়ে মিউকাসের মতাে নিঃসরণ আসে, দ্রুত তা পুঁজে পরিণত হয়।
- প্রােস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ, সেমিনাল ভেসিকলের প্রদাহ এবং এপিডিডাইমিসের প্রদাহের সঙ্গে জ্বর হয়।
- মূত্রনালির অস্বাভাবিক সংকীর্ণতা ঘটতে পারে।
- দীর্ঘদিন সংক্রমণের কারণে অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ, ত্বকে ক্ষত, সেপটিসেমিয়া, মস্তিষ্কের প্রদাহ এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হতে পারে।
- সমকামীরা পায়ুপথের যৌনসঙ্গম করলে পায়ুপথ সংক্রমিত হয়ে মলনালিতে তীব্র ব্যথা হয় এবং রসে ভিজে যায়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে গনোরিয়ার লক্ষণ
শতকরা ৫০-৭৫ ভাগ মহিলা উপসর্গহীন অবস্থায় থাকে। যাদের উপসর্গ দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে-
- যৌনাঙ্গ সংক্রমণের কারণে যােনির ওষ্ঠে লাল, দগদগে ঘা হয়। যােনিপথে হলদে বা হলদে সবুজ বর্ণের স্রাব বের হয়।
- প্রস্রাবের যন্ত্রণা, প্রস্রাবের তীব্র আকাঙক্ষা, ঘন ঘন প্রস্রাব করা । তলপেটে ব্যথা হয়। ডিম্বনালিতে প্রদাহ হয়।
- মাসিক অনিয়মিত হয় এবং তীব্র ব্যথা হয়।
- পায়ুপথে সঙ্গম থেকে কিংবা নিজ যােনি থেকে পায়ুপথ সংক্রমিত হলে মলনালি পথে নিঃসরণ ও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- দীর্ঘদিন সংক্রমণের কারণে অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ, ত্বকে ক্ষত, সেপটিসেমিয়া, মস্তিষ্কের প্রদাহ এবং হৃদপিণ্ডে ক্ষতি হতে পারে। ডিম্বনালিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সারা জীবনের জন্য বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে।
- মায়ের এ রােগ থাকলে শিশু অপথালমিয়া নিওন্যাটারাম (Opthalmia neonaterum) নামক চোখের প্রদাহ নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
গনোরিয়া রোগের চিকিৎসা
বর্তমানে গনােরিয়ার অনেক ওষুধ বের হয়েছে। রােগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। জটিলতাহীন গনােরিয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত একক মাত্রার উপযুক্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ বেশ ভালাে কাজ দেয়। সাধারণত পেনিসিলিন ব্যবহারে সংক্রমণ সেরে যায়। কিন্তু অন্যান্যক্ষেত্রে ৫০% পর্যন্ত সংক্রমণ পুরােপুরি পেনিসিলিনের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ক্ষমতাসম্পন্ন। একক মাত্রায় সিপ্রােফ্লোক্সাসিন গনােরিয়া চিকিৎসায় বেশ কার্যকর।
গনোরিয়া রোগের প্রতিরােধ
- ১। নিরাপদ যৌন সঙ্গম করা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি মেনে চলা।
- ২।বহুগামীতা পরিত্যাগ করা এবং অনিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।
- ৩। যৌন মিলনে কনডম ব্যবহার করা।
- ৪। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কারও সাথে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা।
- ৫। আক্রান্ত রােগীর যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।