গলগি বডি এর গঠন ও কাজ।

গলগি বডি

নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থিত দু’স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে বেষ্টিত নালিকা, জালিকা, ফোস্কা, থলি ইত্যাদি আকৃতির সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুকে গলগি বডি বলা হয়।

আবিষ্কার

ইতালীয় স্নায়ুতত্ত্ববিদ ক্যামিলাে গলগি (১৮৯৮) পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলগি বডি আবিষ্কার করেন এবং তাঁর নামানুসারেই এ ক্ষুদ্রাঙ্গের নাম রাখা হয়।

উৎপত্তি

গলগিবডির উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। তবে এদের সঙ্গে এন্ডোপ্লাজমিয় রেটিকুলামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা থেকে এদের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

গলগিবডির আকৃতি

এরা লম্বা চ্যাপ্টা থলির মত। এদের আয়তন তিন রকমের হয় ৬০- ৭০ Å ব্যাস যুক্ত চ্যাপ্টা থলি, অতিক্ষুদ্র গোলাকার ৩০-৪০Å ব্যাস যুক্ত ভেসিকল, এবং ৬০-২০০Å ব্যাস যুক্ত বড় গহবর।

গলগি বস্তুর সংখ্যা

কোষে এদের সংখ্যা প্রচুর হয়। ক্ষরণ কোষে এদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

অবস্থান

গলগি বডি প্রাণী কোষের একটি অনন্য সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু। উদ্ভিদ কোষে এরা সংখ্যায় কম থাকে। অধিকাংশ কোষে সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি দলবদ্ধ অবস্থায় গলগি বডি দেখা যায়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় গলগি বডি বিদ্যমান থাকে।

গলগি বডি এর গঠন ও কাজ।

গঠন

এর গঠনকে দু’ভাবে আলােচনা করা হয়। যথা- (ক) ভৌত গঠন এবং (খ) রাসায়নিক গঠন।

(ক) ভৌত গঠন-

গলগি বডিতে তিন ধরনের উপাদান বিদ্যমান থাকে। যথা- সিস্টার্নি, ভ্যাকুওল ও ভেসিকল।

সিস্টার্নি

অসমান দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ও সমান্তরালভাবে অবস্থিত লম্বা ও চ্যাপ্টা নালিকাসদৃশ বস্তুগুলাে সিস্টার্নি নামে পরিচিত। সম্ভবত মসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা হতে সিস্টার্নির উৎপত্তি হয়।

ভ্যাকুওল

এগুলাে সিস্টার্নির কাছে অবস্থিত গােলাকৃতির থলির ন্যায় অংশ। সিস্টার্নির প্রাচীর চওড়া হয়ে ভ্যাকুওলের সৃষ্টি করে।

ভেসিকল

সিস্টার্নির নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলির ন্যায় বস্তুগুলােকে ভেসিকল বলে।

(খ) রাসায়নিক গঠন-

গলগি বডির ঝিল্লী লিপােপ্রােটিন দিয়ে গঠিত। লিপিডের মধ্যে রয়েছে প্রধানত লেসিথিন ও কেফালিন জাতীয় ফসফোলিপিড। এছাড়া এতে ক্যারােটিনয়েড, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-সি প্রভৃতিও রয়েছে। গলগি বডি এনজাইমে পরিপূর্ণ থাকে।

কাজ

  • ১। গলগি বডি লাইসােসােম তৈরি করে।
  • ২। এরা হরমােনসহ বিভিন্ন প্রকার বিপাকীয় দ্রব্য ক্ষরণ ও নিঃসরণ করে।
  • ৩। এরা শুক্রাণু গঠনে সহায়তা করে।
  • ৪। কোষ প্রাচীর ও প্লাজমা মেমব্রেন গঠনে সাহায্য করে।
  • ৫। এরা প্রােটিন সঞ্চয় করে।
  • ৬। মাইটোকন্ড্রিয়ায় এটিপি (ATP) সৃষ্টির জন্য ভেসিকল দরকারী এনজাইম সৃষ্টি করে।

গলগি বডিকে কোষের ‘ট্রাফিক পুলিশ’ বলা হয় কেন?

গলজি বডি মূলত কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু, যা প্রোটিন ও লিপিড প্রসেসিং, প্যাকেজিং এবং কোষের ভেতরে এবং বাইরে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করে। এর কার্যক্রমকে ট্রাফিক পুলিশের মতো মনে করা হয়, কারণ এটি কোষের মধ্যে সঠিক সময়ে এবং সঠিক জায়গায় প্রোটিন ও অন্যান্য পদার্থকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।

Leave a Comment