নিমাটোসিস্টের প্রকারভেদ
হাইড্রার নিমাটোসিস্টের সূত্রকের গঠনের উপর ভিত্তি করে নেমাটোসিস্ট চার ধরণের হয়।যথাঃ-
(ক) স্ট্রেপটোলিন বা কন্টকময় গ্লুটিন্যান্ট নিমাটোসিস্ট (streptoline glutinant)
এসব নিমাটোসিস্টের থলি ছােট, এবং সূত্রকের গায়ে ছােট ছােট কাটা বা বার্বিউল থাকে। সূত্রকের মুক্ত প্রান্ত খােলা।সূত্রকের গােড়ায় বাট বা স্ফীতি এবং বার্ব নাই।
কাজ : স্ট্রেপটোলিন গুটিন্যান্ট সূত্রকের সাহায্যে শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে। এরা চলনে সহায়তা করে।
(খ) স্টেরিওলিন বা কন্টকবিহীন গুটিন্যান্ট নিমাটোসিস্ট (Stereoline glutinant)
এসব নিমাটোসিস্টের বাল্ব ছােট, সূত্রকের দেহ কন্টকবিহীন। সূত্রকের গােড়ায় স্ফীতি বা বাট (Butt) নাই, সূত্রকের গায়ে বার্ব ও বার্বিউল নাই।
কাজ: উভয় ধরনের গুটিন্যান্ট প্রধানতঃ শিকার ধরায় ও চলনে অংশ নেয়।

(গ) ভলভ্যান্ট নিমাটোসিস্ট (Volvant nematocyst)
এসব নিমাটোসিস্টের থলিটা ক্ষুদ্র, গােলাকার এবং সুত্রকের গােড়ায় স্ফীতি নাই এবং দেহে কোন কন্টক থাকে না। ব্যবহারের পূর্বে বা বিশ্রামরত অবস্থায় সূত্ৰকটা কর্কের স্ক্রুর মতাে প্যাচানাে অবস্থায় থলির ভিতর অবস্থান করে। সূত্রকের অগ্রভাগ বন্ধ।
কাজঃ শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে এবং চলনে সহায়তা করে।
(ঘ) পেনিট্রান্ট বা আদর্শ নিমাটোসিস্ট (Penetrant or typical nematocyst)
গঠন
পেনিট্যান্ট নিমাটোসিস্টের বাল্ব সর্বাপেক্ষা বড় ও ফেনােল এবং আমিষের সমন্বয়ে গঠিত হিপ্নোটক্সিন রস দ্বারা পূর্ণ থাকে।
এদের সূত্রকের গােড়াটা স্ফীত এবং গােড়ায় ৩টি বড় কাঁটা বা বার্ব (Barb) এবং ৩ সারি ছােট কাটা বা বার্বিউল (Barbule) থাকে। সূত্রকের অগ্রপ্রান্ত খােলা এবং দেহ কন্টকবিহীন।
সূত্রকটি লম্বা ও নলাকার। সূত্রকের স্ফীত গােড়াকে বাট বা শ্যাফট (Butt বা Shaft) বলে।
কাজঃ এই নিমাটোসিস্টের বার্বগুলি শিকারের গায়ে বিদ্ধ হয়। এদের বার্বিউল ও সূত্রক শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে এবং হিপ্নোটক্সিন প্রয়োেগ করে শিকারকে অবশ করে ফেলে বা মেরে ফেলে।
পেনিট্ট্যান্ট নিমাটোসিস্ট তথা নিমাটোব্লাস্টের কার্যপদ্ধতি
আদর্শ নিমাটোসিস্ট প্রধানতঃ শিকার ধরা ও আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।
শত্রু বা শিকার পেনিট্র্যান্ট নিমাটোসিস্টের নিডােসিলের সংস্পর্শে এলে শিকারের স্পর্শ দ্বারা নিডােসিল উত্তেজিত হয়। এই উত্তেজনা কোষের সাইটোপ্লাজমে প্রেরিত হয়। এতে নিডােব্লাস্টের পানির ভেদ্যতা বেড়ে গিয়ে কোষাভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করে।
ফলে নিমাটোসিস্টের বাল্বের গায়ের পেশী তন্তুগুলাে সংকুচিত হয় এবং ওপারকুলাম খুলে যায়। একই সাথে থলিসহ সূত্রকটি অথবা শুধুমাত্র সূত্রকটি ক্ষিপ্রবেগে বের হয়ে গিয়ে শিকার বা শত্রুকে পেঁচিয়ে ধরে।
এ সময় প্রায় একই সাথে বার্বগুলাে শিকারের দেহে বিদ্ধ হয় এবং সূত্রকের অগ্রপ্রান্তের ছিদ্রপথ দিয়ে বিষাক্ত হিপ্লোটক্সিন শিকারের দেহে প্রবেশ করে।
ফলে শিকার প্রাণীটা মারা যায় বা অবশ হয়ে যায়। বার্বিউলগুলিও শিকারকে পেঁচিয়ে ধরায় অংশ নেয়।