পেশি কলা/পেশি টিস্যু কী?
ভ্রূণীয় মেসােডার্ম থেকে উদ্ভূত যে কলা অসংখ্য তন্তুর মতাে কোষের সমন্বয়ে গঠিত এবং সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে প্রাণী দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ঘটায় তাকে পেশি কলা বলে। দেহ ওজনের শতকরা প্রায় ৪০-৫০ ভাগ পেশি কলা।
পেশিকলার বৈশিষ্ট্য
- ১। ভ্রূণীয় মেসােডার্ম থেকে পেশি কলা উৎপন্ন হয়।
- ২। মায়ােব্লাস্ট নামক আদিকোষ রূপান্তরিত হয়ে তন্তুর মতাে লম্বা পেশিকোষে রূপান্তরিত হয়।
- ৩। পেশিকোষের আবরণীকে সারকোলেমা এবং সাইটোপ্লাজমকে সারকোপ্লাজম বলে।
- ৪। সারকোপ্লাজমের মধ্যে পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থিত অসংখ্য মায়ােফাইব্রিল নামক সূক্ষ্ম তন্তু থাকে। মায়ােফাইব্রিলগুলাে অ্যাকটিন ও মায়ােসিন নামক প্রােটিন দিয়ে গঠিত।
- ৫। পেশি কলার কোষগুলাের সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা খুব বেশী।
- ৬। এদের ৭৫% পানি এবং অবশিষ্টাংশ বিভিন্ন প্রকার কঠিন পদার্থ।
পেশি কলার প্রকারভেদ
অবস্থান, গঠন ও কাজের তারতম্যের ভিত্তিতে পেশি কলাকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
ঐচ্ছিক বা কঙ্কাল বা অমসৃণ পেশি (Voluntary or skeleted or striated Muscle)
যেসব পেশি স্নায়ুবিক অথবা হরমােন উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হয়ে কর্মতৎপর হয় অর্থাৎ যেসব পেশি স্বেচ্ছায় সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহ সঞ্চালনের মুখ্য ভূমিকা পালন করে তাদের ঐচ্ছিক পেশি বলে। এসব পেশি কঙ্কালের সাথে আটকে থাকে বলে এদেরকে কঙ্কাল পেশি বলে।
এসকল পেশির কোষগুলাে তন্তুর মতাে, তাই এদেরকে পেশিতন্তু বলে। প্রতিটি পেশিকোষ এন্ডােমাইসিয়াম নামক যােজক কলার আবরণে আবৃত। কোষগুলাে বিক্ষিপ্ত না থেকে গুচ্ছাকারে বান্ডল সৃষ্টি করে। এ গুচ্ছাকার বান্ডলকে ফ্যাসিকুলাস বলে। এ বান্ডলগুলাে পেরিমাইসিয়াম আবরণে আবৃত থাকে। পেশিকোষগুলাে নলাকার লম্বা। দৈর্ঘ্যে ১-৪০ মিলিমিটার,প্রন্থে ০.০১-০.১০ মিলিমিটার হয়।

কোষগুলাে সারকোলেমা নামক আবরণে আবৃত থাকে। এদের সাইটোপ্লাজমকে সারকোপ্লাজম বলে। কোষের অভ্যন্তরে অসংখ্য ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস থাকে। প্রতিটি পেশিকোষের অভ্যন্তরে কতকগুলাে অতিসূক্ষ্ম তন্তু বা মায়ােফাইব্রিল পাওয়া যায়। প্রধানতঃ অ্যাকটিন ও মায়ােসিন নামক প্রােটিন দিয়ে মায়ােফাইব্রিল গঠিত।
ঐচ্ছিক পেশির অবস্থান
বিভিন্ন অস্থির সাথে, চোখে, জিহ্বায়, গলবিল ইত্যাদিতে ঐচ্ছিক পেশি থাকে।
ঐচ্ছিক পেশির কাজ
ঐচ্ছিক পেশির সংকোচন প্রসারণে প্রাণীরা স্থানান্তরিত হয় এবং ইচ্ছানুসারে অঙ্গ সঞ্চালন করতে পারে।
অনৈচ্ছিক বা অরৈখিক বা মসৃণ পেশি (Involuntary or non-striated or smooth muscle)
যেসকল পেশির সংকোচন প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, তাদেরকে অনৈচ্ছিক পেশি বলে। এদের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এদের মায়ােফাইব্রিলে ডােরাকাটা থাকে না বলে এদেরকে অরৈখিক বা মসৃণ পেশি বলে ।
অনৈচ্ছিক পেশির কোষগুলাে দেখতে ক্ষুদ্রাকার ও মাকু আকৃতির। এদের দৈর্ঘ্য ১৫-২০০ মাইক্রোন এবং ব্যাস প্রায় ৩-৮ মাইক্রোন পর্যন্ত হতে পারে। কোষের মধ্যবর্তী স্থানে একটি মাত্র নিউক্লিয়াস থাকে। কোষগুলাের বিন্যাস এমনভাবে হয় যে একটি কোষের চওড়া স্থানটি অন্য কোষের সরু প্রান্তভাগের সাথে মিলে থাকে।
অনৈচ্ছিক পেশির অবস্থান
পরিপাক নালির গাত্র, জরায়ুর প্রাচীর, গ্রন্থিনালি, রক্তনালি মূত্রথলি ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে।
অনৈচ্ছিক পেশির কাজ
এসকল পেশির সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা ধীর ও দীর্ঘস্থায়ী। পেরিস্টালসিস প্রক্রিয়ায় পৌষ্টিকনালির খাদ্যবস্তু উপর থেকে নিচের দিকে নামে।
হৃদপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি (Cardiac muscle)
হৃদপিণ্ডের প্রাচীরে বিদ্যমান বিশেষ প্রকৃতির অনৈচ্ছিক পেশিকে হৃদপেশি বলে। এসকল পেশির সংকোচন প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। তবে প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ছন্দে অবিরামভাবে সংকোচন প্রসারণ ঘটে। হৃদপেশির কোষগুলাে নলাকার, তবে প্রশাখাযুক্ত এবং তুলনামূলকভাবে খাটো। এদের দৈর্ঘ্য ০.৮ মিলিমিটার এবং ব্যাস ১২-১৮/মি পর্যন্ত হয়।
দৈর্ঘ্য বরাবর একটি কোষের সাথে অপর একটি কোষের সংযােগস্থলে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক থাকে। কোষাভ্যন্তরে একটি মাত্র নিউক্লিয়াস থাকে। এছাড়া কোষে অনুপ্রস্থ ডােরা পরিলক্ষিত হয়। এসকল পেশির সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দ্রুত এবং কখনাে ক্লান্ত হয় না।
কাজঃ হৃদপিণ্ডের সংকোচন প্রসারণ ঘটিয়ে প্রাণী দেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।