প্রতিবর্তি ক্রিয়ার উপর বিজ্ঞানী প্যাভলভের পরীক্ষণ
সাপেক্ষ প্রতিবর্তি মতবাদ ও রাশিয়ার শারীরতত্ত্ববিদ আইভান প্যাভলভের কুকুরের লালা নিঃসরণের পরীক্ষণ শিখন আচরণের এক বিস্ময়কর ঘটনা। আমরা জানি কুকুরের মুখে মাংসের টুকরা দিলে মুখ গহ্বরে লালা নিঃসৃত হয়। এটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
কিন্তু বিজ্ঞানী আইভান প্যাভলভ ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে মাংসের টুকরা দেওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঘণ্টা বাজান। তিনি এভাবে ঘণ্টা বাজিয়ে সাথে সাথে এক টুকরা মাংস কুকুরকে দিতে থাকেন। এ কাজটি বার বার করতে থাকেন। এতে প্রতিবারই কুকুরের মুখে লালা নিঃসৃত হতে থাকে।
তিনি প্রতিবারই যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে লালা নিঃসরণের মাত্রা পরিমাপ করেন। কাজটি বেশ কয়েকবার (অন্তত ১২ বার) পুনরাবৃত্তির পর হঠাৎ করে মাংসের টুকরা না দিয়ে তিনি কেবল ঘণ্টা বাজান। এ পর্যায়ে দেখা গেল, কেবল ঘণ্টাধ্বনির প্রতি প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কুকুরটি লালা নিঃসরণ করলাে।

এরপর মাংসের টুকরা না দিয়ে প্যাভলভ যতবার শুধু ঘণ্টা বাজালেন ততােবার সাথে সাথে কুকুরের মুখ থেকে লালা নিঃসৃত হলাে। অর্থাৎ ঘণ্টাধ্বনির সাথে কুকুরের লালা নিঃসরণের একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
ঘণ্টাধ্বনি এবং মাংসের টুকরার যুগপৎ উপস্থাপনের ফলে এদের মধ্যে এক সংযােগ গড়ে উঠেছে। এ সংযােগ ব্যবস্থা কুকুরের মস্তিষ্ক স্নায়ুবিক। সংযােগের মাধ্যমে কার্যরত। এরূপ মস্তিষ্কজাত সংযােগ ক্রিয়াকে প্যাভলভ চিরায়ত সাপেক্ষণ নামে আখ্যায়িত করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ঘণ্টাধ্বনি প্রথমে একটি নিরপেক্ষ উদ্দীপক ছিল। কিন্তু ঘণ্টাধ্বনির সাথে মাংসের টুকরাে কয়েকবার উপস্থাপনের ফলে কুকুরটি ঘণ্টাধ্বনির প্রতি লালা নিঃসরণ করতে শিখলাে।
এজন্য ঘণ্টাধ্বনিকে সাপেক্ষ উদ্দীপক এবং ঘণ্টাধ্বনির প্রতি লালা নিঃসরণের ঘটনাকে সাপেক্ষ প্রতিক্রিয়া বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং বলা যায় যে সাপেক্ষ উদ্দীপকের প্রতি প্রাণী যে প্রতিক্রিয়া করে তাই সাপেক্ষ প্রতিবর্তি ক্রিয়া বা সাপেক্ষণ।