মাইটোকন্ড্রিয়া
কোষের বেশিরভাগ শক্তি উৎপাদনকারী শক্তিঘর নামে পরিচিত অঙ্গাণুকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে।
মাইটোকন্ড্রিয়া হলাে প্রকৃত জীবকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। কোষের যাবতীয় জৈবনিক কাজের শক্তি সরবরাহ থাকে। তাই মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তি ঘর বলা হয়। এতে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি অ্যাসিড চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপাের্ট সিস্টেম ইত্যাদি সংঘটিত হয়।
আবিষ্কার
কলিকার (১৮৫০) সাইটোপ্লাজমে এসব অঙ্গাণু আবিষ্কার করেন। অল্টম্যান (১৮৯৪) মাইটোকন্ড্রিয়ার উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। বেন্ডা (১৮৯৮) মাইটোকন্ড্রিয়ার নামকরণ করেন।
উৎপত্তি
পুরাতন মাইটোকন্ড্রিয়া বিভাজনের মাধ্যমে নতুন মাইটোকন্ড্রিয়া সৃষ্টি করে। বিভাজনের মাধ্যমে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। কোষে একটিমাত্র মাইটোকন্ড্রিয়া থাকলে তা কোষ বিভাজনের সাথেই বিভাজিত হয়।
সংখ্যা
প্রজাতি ও প্রকারভেদে প্রতি কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া এক হতে বহু সংখ্যক হতে পারে। সাধারণত প্রতি কোষে ৩০০-৪০০ মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে। তবে যকৃত কোষ ১০০০ বা ততােধিক থাকে। অ্যামিবাতে আরও বেশি থাকে।
আয়তন
আকারভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার আয়তন বিভিন্ন রকম হয়। বৃত্তাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ০.২ থেকে ২.০ মাইক্রোমিটার। সূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়া ৪০ মাইক্রোমিটার থেকে ৭০ মাইক্রোমিটার ও দন্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৯ মাইক্রোমিটার ও প্রস্থ ০.৫ মাইক্রোমিটার হতে পারে।

মাইটোকন্ড্রিয়ার ভৌত গঠন
মাইটোকন্ড্রিয়া নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত-
ঝিল্লী
প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়া দুস্তরবিশিষ্ট ঝিল্লী দিয়ে আবৃত থাকে। এদেরকে বহিঃঝিল্লী ও অন্তঃঝিল্লী বলে। দু’ঝিল্লীর মধ্যে ব্যবধান ৬-৮ nm।প্রকোষ্ঠদুটি ঝিল্লীর মাঝখানে অবস্থানকৃত প্রকোষ্ঠকে বহিঃপ্রকোষ্ঠ বলে যা কোএনজাইম-এ (Coenzyme A) সমৃদ্ধ তরল পদার্থ দিয়ে পূর্ণ থাকে অন্তঃঝিল্লীবেষ্টিত ভেতরের গহবরকে অন্তঃপ্রকোষ্ঠ বলে যাতে দানাদার বস্তু সমন্বিত তরল পদার্থের ধাত্র (Matrix) বিদ্যমান।
ক্রিস্টি
বাইরের ঝিল্লীটি সােজা কিন্তু ভেতরের ঝিল্লীটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের ন্যায় প্রবর্ধক বা ক্রিস্টি সৃষ্টি করে। এগুলাে মাইটোকন্ড্রিয়ার ধাত্রকে কতকগুলাে অসম্পূর্ণ প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে। ক্রিস্টির ভেতরকার গহবরকে অন্তঃক্রিস্টি গহবর বলে যা বহিঃপ্রকোষ্ঠের সাথে যুক্ত।
ATP সিন্থেসেস ও ETS
ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP সিন্থেসেস নামক গােলাকার বস্তু থাকে।
এতে ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সমস্ত ক্রিস্টিব্যাপী অনেক ইলেকট্রন ট্রান্সপাের্ট সিস্টেম অবস্থিত। আগে এদেরকে এক সাথে অক্ৰিসােম(Oxysome) হিসেবে অভিহিত করা হত।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ
মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ একটি বৃত্তাকার দ্বিসূত্রক অণু। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য একে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বলে।
রাইবোেসােম
মাইটোকন্ড্রিয়াতে এনজাইম সংশ্লেষণের জন্য রাইবােসােম পাওয়া যায়। এ রাইবােসােম প্ৰকৃতকোষী অপেক্ষা অপ্ৰকৃতকোষী রাইবােসােমের (70s) সাথে তুলনীয়।
মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক গঠন
মাইটোকন্ড্রিয়ার শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রােটিন, ২৯% গ্লিসারাইড, ৪% কোলেস্টেরল থাকে। লিপিডের মধ্যে ৯০% হলাে ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারােটিনয়েড, ভিটামিন ই এবং কিছু অজৈব পদার্থ। মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লী লিপােপ্রােটিনসমৃদ্ধ।মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রায় ১০০ প্রকারের এনজাইম ও কো-এনজাইম থাকে।
মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ
- ১। কোষের যাবতীয় জৈবিক কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
- ২। শ্বসনের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও কোএনজাইম ধারণ করে।
- ৩। শ্বসন এর বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন পরিবহন, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন ইত্যাদি এখানে হয়।
- ৪। কিছু পরিমাণ DNA ও RNA উৎপন্ন করে।
- ৫। ADP কে ATP তে রূপান্তর করার মাধ্যমে ATP তে শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সহায়তা করে।
মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিধর বা পাওয়ার হাউস বলা হয় কেন?
মাইটোকন্ড্রিয়া কে কোষের শক্তিঘর বলা হয় কারণ এটি কোষের এনার্জি উৎপাদনকারী অঙ্গাণু। মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের মধ্যে অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) নামে শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অণু তৈরি করে, যা কোষের বিভিন্ন প্রক্রিয়া চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
মাইটোকন্ড্রিয়া খাদ্য (বিশেষ করে গ্লুকোজ) এবং অক্সিজেন ব্যবহার করে ATP উৎপন্ন করে, যা কোষের প্রতিটি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এই কারণে মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলা হয়।