মায়ােসিস কোষ বিভাজন এর সংজ্ঞা
যে কোষ বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি দু’বার কিন্তু ক্রোমােসােমসমূহ একবার বিভাজিত হয় এবং অপত্য কোষের ক্রোমােসােম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমােসােম সংখ্যার অর্ধেক হয় তাকে মায়ােসিস কোষ বিভাজন বলে।
মায়ােসিস বিভাজন আবিষ্কার
বেনেডিন এবং হাউসার (১৮৮৩) কৃমির গ্যামিটে হ্যাপ্লয়েড (n) সংখ্যক ক্রোমােসােম আবিষ্কার করেন। Strashburger ১৮৮৮ সালে পুষ্পক উদ্ভিদের জনন মাতৃকোষের ক্রোমােসােমে হ্রাসমুলক বিভাজন প্রত্যক্ষ করেন। J. B. Farmer ও J. E. Moore ১৯০৫ সালে সর্বপ্রথম হ্রাসমুলক বিভাজনকে মায়ােসিস বলেন।
মায়ােসিস কোষ বিভাজন কোথায় ঘটে?
মায়ােসিস সর্বদা জনন মাতৃকোষে সম্পন্ন হয়। কখনই দৈহিক কোষে মায়ােসিস ঘটে না। মায়ােসিস সর্বদাই ডিপ্লয়েড (2n) সংখ্যক ক্রোমােসােমবিশিষ্ট কোষে সংঘটিত হয়।
নিম্নশ্রেণির জীবে(হ্যাপ্লয়েড) মায়ােসিস ঘটে নিষেকের পর জাইগােটে। অপরদিকে উচ্চশ্রেণির জীবে (ডিপ্লয়েড) মায়ােসিস হয় নিষেকের পূর্বে জনন মাতৃকোষ থেকে গ্যামিট সৃষ্টির সময়।
মায়ােসিস কোষ বিভাজনের ধাপ
মাইটোসিসের ন্যায় মায়ােসিসও একটি অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোষ, নিউক্লিয়াস এবং ক্রোমােসােম এর বিভক্তির উপর ভিত্তি করে মায়ােসিস কোষ বিভাজনকে দুটি পর্বে ভাগ করা হয়। যথা-
- মায়ােসিস-১
- মায়ােসিস-২

মায়ােসিস-১ কোষ বিভাজন
মায়ােসিসের এ পর্যায়ে ডিপ্লয়েড (2n) কোষের ক্রোমােসােম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক হয় এবং সমসংস্থ (Homologous) ক্রোমােসােমের মধ্যে পারস্পরিক অংশের বিনিময় (Crossing Over) হয়।
মায়ােসিস প্রক্রিয়ায় একটি কোষ পরপর দু’বার বিভক্ত হয়। কোষের প্রথম বিভাজনের সময় অপত্য কোষে ক্রোমােসােম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমােসােম সংখ্যার অর্ধেক হয়। প্রথম বিভাজনের জন্য একে মায়ােসিস-১ নামকরণ করা হয়েছে। যেহেতু মায়ােসিস-১ এ ক্রোমােসােম সংখ্যা হ্রাস পায় তাই মায়ােসিস কোষ বিভাজনকে হ্রাসমুলক বিভাজনও বলা হয়।
মায়ােসিস-১ এর ধাপসমূহ
মায়ােসিস-১ কয়েকটি ধারাবাহিক ধাপে সম্পন্ন হয়-
- প্রােফেজ-১
- মেটাফেজ-১
- অ্যানাফেজ-১
- টেলােফেজ-১
প্রােফেজ-১
পর্যায়টি দীর্ঘস্থায়ী। এ পর্যায়ে নিউক্লিয়াসটি আকারে বৃদ্ধি পায় এবং ক্রোমােসােমের DNA এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ পর্যায়কে পাঁচটি উপ পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। যথা—
- লেপ্টোটিন
- জাইগােটিন
- প্যাকাইটিন
- ডিপ্লটিন
- ডায়াকাইনেসিস।
লেপ্টোটিন (Leptotene)
গ্রীক Leptos = চিকন, পাতলা ; Tene = সুতা) এই ধাপের বৈশিষ্ট্য-
- প্রােফেজ-১ এর লেপ্টোটিন উপ পর্যায়ে নিউক্লিয়াসে পানি বিয়ােজন শুরু হয়।
- ক্রমাগত পানি বিয়ােজনের ফলে ক্রোমােসােমও ক্রমান্বয়ে সংকুচিত ও পুরু হতে থাকে। যৌগিক অণুবীক্ষণযন্ত্রে ক্রোমােসােমগুলােকে সুতার ন্যায় মনে হয়। সংকুচিত হওয়াকে কয়লিং বলে।
- ক্রোমােসােমগুলাে অবিভক্ত, দীর্ঘ ও জট পাকানাে অবস্থায় থাকে বলে এদের সংখ্যা নির্ণয় করা যায় না।
- প্রতিটি ক্রোমােসােমে বহু ক্রোমােমিয়ার দেখা যায়।
- প্রাণিকোষে উপ-পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ারগুলো সাধারণত নিউক্লিয়ার এনভেলপের সন্নিকটে এক স্থানে এসে জড়ো হওয়ায় ক্রোমোসোমগুলোকে একত্রে একটি ফুলের তোড়ার মতো দেখায়। তাই অনেক সময় একে বুকে (bouquet) বলা হয়। প্রাণিকোষে ক্রোমোসোমের পোলারাইজড বিন্যাস ঘটে।

জাইগােটিন (Zygotene)
গ্রিক Zygos = জোড়া, Tene = সুতা এই ধাপের বৈশিষ্ট্য-
- এ উপপর্যায়ে সমসংস্থ বা হােমােলােগাস (Homologous)একই আকৃতি ও জিনের একই প্রকার সজ্জারীতিসম্পন্ন ক্রোমােসােমদ্বয় যার একটি ঐ জীবের মাতা ও অন্যটি পিতা থেকে আসে) ক্রোমােসােমগুলাে পাশাপাশি অবস্থান করে।
- হােমােলােগাস ক্রোমােসােমদ্বয়ের মধ্যে পরস্পর আকর্ষণের ফলে একটি জোড়ার সৃষ্টি হয় এবং পরস্পরের সাথে জোড়া সৃষ্টি করাকে সিন্যাপসিস (Synapsis) বলে ।
- হােমােলােগাস ক্রোমােসােমের প্রত্যেকটি জোড়াকে এক একটি বাইভেলেন্ট (Bivalent) বলে। বাইভেলেন্ট সৃষ্টির প্রকৃিয়াকে সাইন্যাপসিস বলে।
- কাজেই কোষে যতগুলাে ক্রোমােসােম থাকবে তার অর্ধেক সংখ্যক বাইভেলেন্ট সৃষ্টি হবে।
- এ উপপর্যায়ে নিউক্লিয়ার এনভেলাপ ও নিউক্লিয়ােলাস অবিকৃত অবস্থায় থাকে।
প্যাকাইটিন (Pachytene)
গ্রীক- Pachys = মােটা, পুর; Tene = সুতা) এই ধাপের বৈশিষ্ট্য-

- এ উপপর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলাে আরও মােটা ও খাটো হয়।
- নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিয়ােলাস দেখা যায়।
- বাইভেলেন্টের প্রতিটি ক্রোমােসােম সেন্ট্রোমিয়ার অংশ ব্যতীত দৈর্ঘ্য বরাবর বিভক্ত হয় ফলে প্রতি বাইভেলেন্টে দুটি সেন্ট্রোমিয়ার ও চারটি ক্রোমাটিড থাকে।
- প্যাকাইটিনের পূর্বে প্রতিটি ক্রোমােসােমের দুটি করে ক্রোমাটিড দেখা যায় না।
- একই মাতৃ ক্রোমােসােমের দুটি ক্রোমাটিডকে সিস্টার ক্রোমাটিড (Sister Chromatid) এবং একই বাইভেলেন্ট বা জোড়ার প্রতিটি ক্রোমােসােম থেকে একটি করে ক্রোমাটিড নিয়ে গঠিত দুটি ক্রোমাটিডকে নন সিস্টার ক্রোমাটিড (Non sister Chromatid) বলা হয়।
- উপপর্যায়ের শেষের দিকে বাইভেলেন্ট ক্রোমােসােমগুলাের মধ্যে আকর্ষণ শক্তির পরিবর্তে বিকর্ষণ শক্তি পরিলক্ষিত হয় এজন্য বাইভেলেন্টের ক্রোমােসােম দুটি পরস্পর হতে পৃথক হতে থাকে।
- এ সময় বাইভেলেন্টের দুটি নন সিস্টার ক্রোমাটিড বিভিন্নস্থানে ‘X’ চিহ্নের ন্যায় যুক্ত থাকে। দু’টি নন সিস্টার ক্রোমাটিডের ‘X’ চিহ্নিত জোড়াস্থলকে একবচনে কায়েজমাটা এবং বহুবচনে কায়াজমা বলে।নন সিস্টার ক্রোমাটিডের এরূপ পরস্পর অংশ বিনিময়ের প্রক্রিয়াকে ক্রসিং ওভার বলে। ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমােসােমের যে অংশের বিনিময় হয়, তাতে ক্রোমােসােমের গুণগতমানের পরিবর্তন সাধিত হয়।
ডিপ্লটিন (Diplotene)
গ্রীক- Diplos = ডবল ; Tene = সুতা) এই ধাপের বৈশিষ্ট্য-

- এ উপপর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলাে আরও মােটা ও খাটো হয়। বাইভেলেন্টের দুটি ক্রোমােসােম একে অপরের থেকে আরও দূরে সরে যেতে থাকে কিন্তু কায়াজমা স্থানে বাধা পায়।
- ক্রোমােসােমদ্বয়ের পরস্পরের প্রতি এ বিকর্ষণ একসঙ্গে কয়েকস্থানে শুর হতে পারে। তবে সাধারণত প্রথমে সেন্ট্রোমিয়ার দ্বয়ের মধ্যে শুরু হয়। ক্রোমােসােম দুটির বিকর্ষণ বৃদ্ধির সাথে সাথে কায়াজমা ক্রোমােসােমের প্রান্ত্রে দিকে সরে যেতে থাকে।
- ক্রোমােসােমের প্রান্ত্রে দিকে কায়াজমার এ গমনকে প্রান্তিয়করণ (Terminalization) বলে ।
- বিকর্ষণের ফলে দুটি কায়াজমার মধ্যবর্তী স্থানে ফাঁসের (Loop) সৃষ্টি হয় অতঃপর ক্রোমােসােমের বাহুসমূহের তথা লুপ সমূহের পারস্পরিক আবর্তন দেখা যায়।
- যেখানে বাহুদ্বয়ের মধ্যে একটিমাত্র কায়াজমা থাকে, সেখানে বাহুদ্বয় ১৮০° কোণ উৎপন্ন করে অবস্থান করে।
ডায়াকাইনেসিস(Diakinesis)
গ্রিক- Dia = অপর পাশে ; Kinesis = সমাবেশ) এই ধাপের বৈশিষ্ট্য-
- এ উপ পর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলাে আরও মােটা ও খাটো হয়। প্রান্তিয়করণ তখনও চলতে থাকে এবং শেষে কায়াজমাগুলাে বাইভেলেন্টের প্রান্তে পৌছায়।
- বাইভেলেন্টগুলাে নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রস্থল হতে পরিধির দিকে চলে আসে।
- নিউক্লিয়ােলাস অদৃশ্য হয় এবং নিউক্লিয়ার এনভেলাপ এর অবলুপ্তি ঘটতে থাকে।
- এ উপপর্যায়ের শেষ ভাগে নিউক্লিয়ার এনভেলাপের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটে।

মেটাফেজ-১
এটি মাইটোসিসের মেটাফেজের অনুরূপ, তবে বিষুবীয় অঞ্চলে বিভক্ত ক্রোমােসােমের পরিবর্তে বাইভেলেন্টগুলাে বিন্যাস্ত থাকে। বাইভেলেন্টের দুটি সেন্ট্রোমিয়ারের একটি এক মেরুর দিকে (যেমন- উপরের মেরুর দিকে) এবং অন্যটি অপর মেরুর দিকে (যেমন- নিচের মেরুর দিকে) মুখ করে অবস্থান করে এবং সেন্ট্রোমিয়ার দুটি বিষুবীয় রেখা হতে সমদূরে থাকে। কতিপয় আকর্ষণ তন্তুর সাথে (একে ক্রোমােসােমাল তন্তু বা ট্র্যাকশন ফাইবার বলা হয়) ক্রোমােসােমের সেন্ট্রোমিয়ার যুক্ত থাকে।
অ্যানাফেজ-১
এ পর্যায়ে বাইভেলেন্টের দুটি ক্রোমােসােম (ক্রোমাটিড নয়) দু’বিপরীত মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ক্রোমােসােমের এ ধরনের চলনের সময় সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী হয় এবং ক্রোমােসােমের বাহু অনুগামী হয়। ফলে ক্রোমােসােমগুলাে V (মেটাসেন্ট্রিক), L (সাবমেটাসেন্ট্রিক), J (অ্যাক্রোসেন্ট্রিক) ও I (টেলােসেন্ট্রিক) প্রভৃতি আকার ধারণ করে। এ পর্যায়ে প্রতিটি কোষ মেরু অভিমুখে দেহ কোষীয় ক্রোমােসােমের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমােসােম গমন করে। অর্থাৎ প্রতিটি মেরতে ক্রোমােসােম সংখ্যা অর্ধেক হয় ।

টেলােফেজ-১
এ পর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলাে মেরুপ্রান্তে চলে আসে। প্রান্তে পৌছানাে ক্রোমােসােমগুলাের পাক খুলে যায় এবং পানি যােজনের ফলে লম্বা সরু সুতার ন্যায় ক্রোমাটিড গঠন করে। নিউক্লিয়ােলাসের পুনরাবির্ভাব হয় এবং নিউক্লিয়ার এনভেলাপের সৃষ্টি হয়। এভাবে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয় যাদের ক্রোমােসােম সংখ্যা মাতৃকোষের (2n) অর্ধেক সংখ্যক (n) হয়।
ইন্টারকাইনেসিস
মায়ােসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াসের প্রথম ও দ্বিতীয় বিভক্তির অন্তর্বর্তীকালীন বা মধ্যবর্তী সময়কে ইন্টারকাইনেসিস বলা হয়। এ সময়ে দরকারী আরএনএ (RNA),প্রােটিন ইত্যাদি সংশে[ষিত হয়। ডিএনএ (DNA)এর প্রতিরূপ বা অনুলিপন ঘটে না।
মায়ােসিস-২
এ বিভাজনটি ঘটে মূলত মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার অনুরূপ। মাইটোসিসের সময় ডিএনএ অণুর যে প্রতিরূপ সৃষ্টি হয় তা এখানে দরকার হয় না। কারণ প্রক্রিয়াটি প্রােফেজ-১ ধাপের আগেই সম্পন্ন হয়। মায়ােসিস-২ সংঘটিত হয় হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াসে। এরূপ প্রতিটি নিউক্লিয়াস থেকে পরিণামে দুটি করে হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয়। কাজেই সম্পূর্ণ মায়ােসিসে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস তথা চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) কোষ উৎপন্ন হয়।
মায়ােসিস- ২ এর ধাপসমূহ
মায়ােসিস-১ দ্বারা সৃষ্ট প্রতিটি নিউক্লিয়াস মায়ােসিস-২ দ্বারা বিভক্ত হয়। মায়ােসিস-২ কে আবার চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যথা-
- প্রােফেজ-২,
- মেটাফেজ-২,
- অ্যানাফেজ-২ এবং
- টেলােফেজ-২
প্রােফেজ-২
এ পর্যায়ে নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং পানি বিয়ােজনের ফলে ক্রোমােসােমগুলাে পুনরায় সংকুচিত হয়। ফলে ক্রোমােসােমগুলাে মােটা ও খাটো হয়। ক্রোমােসােমগুলাে ক্রোমাটিডে বিভক্ত অবস্থায় থাকে। এ পর্যায়ের শেষে নিউক্লিয়ােলাস ও নিউক্লিয়াপর্দা অদৃশ্য হয়।

মেটাফেজ-২
এ পর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলাে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যল্ড থাকে এবং আরও মােটা ও খাটো হয়। শেষ পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয়, ফলে প্রতিটি ক্রোমাটিড তার নিজস্ব সেন্ট্রোমিয়ার লাভ করে।
অ্যানাফেজ-২
ক্রোমাটিড থেকে উৎপন্ন অপত্য-ক্রোমােসােমগুলাে আকর্ষণ তন্তুর (ক্রোমােসােমাল তন্তুর) সংকোচনের ফলে দু’মেরুতে সমভাবে বন্টিত হয়। আকর্ষণ তন্তুর সংকোচন ও ক্রোমাটিডগুলাের পারস্পরিক বিকর্ষণের ফলে ক্রোমােসােমগুলাে মেরুর দিকে অগ্রসর হয় এবং শেষে মেরুতে পৌছায়।

টেলােফেজ-২
এ পর্যায়ে ক্রোমােসােমগুলােতে পানিযােজন ঘটে, ফলে ক্রোমােসােমগুলাে সর ও লম্বা হতে থাকে এবং রঞ্জক ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে আর দেখা যায় না। উভয় মেরুতে ক্রোমােসােমের চারপাশে নিউক্লিয়ার এনভেলাপ সৃষ্টি হয় ও ভেতরে নিউক্লিয়ােলাস আবির্ভূত হয়।
সাইটোকাইনেসিস
সাইটোকাইনেসিসের মাধ্যমে সাইটোপাজম বিভক্তি ও কোষ প্রাচীর গঠিত হয় অর্থাৎ দু’মেরুর প্রত্যেকটি নিউক্লিয়াস তার চারপাশে সাইটোপ্লাজম ও কোষ প্রাচীর সহযােগে এক একটি স্বতন্ত্র কোষে পরিণত হয়। এভাবে মায়ােসিসের মাধ্যমে একটি ডিপ্লয়েড (2n) কোষ হতে হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমােসােম সংখ্যাবিশিষ্ট চারটি কোষের সৃষ্টি হয়।
মায়ােসিস কোষ বিভাজনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
- ১। ডিপ্লয়েড জীবে মায়ােসিস সাধারণত জনন মাতৃকোষে ঘটে।
- ২। মায়ােসিস কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াস দু’বার কিন্তু ক্রোমােসােম মাত্র একবার বিভক্ত হয়।
- ৩। প্রােফেজ-১ দীর্ঘস্থায়ী। তাই একে পাঁচটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।
- ৪। হােমােলােগাস ক্রোমােসােম জোড়া বেঁধে বাইভেলেন্ট সৃষ্টি করে।
- ৫। কায়াজমা সৃষ্টি ও ক্রসিংওভার ঘটে ফলে হােমােলােগাস ক্রোমােসােমের মধ্যে জিন বিনিময় ঘটে।
- ৬। একটি মাতৃকোষ হতে চারটি হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।
- ৭। ক্রোমােসােমের স্বতন্ত্র বিন্যাস ঘটে।
- ৮। ক্রসিংওভার ও ক্রোমােসােমের স্বতন্ত্র বিন্যাস ঘটে ফলে এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কোষগুলাে কখনই মাতৃকোষের সমগুণসম্পন্ন হয় না।
- ৯। মায়ােসিস শেষে সৃষ্ট নতুন কোষে নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে। বংশগতিতে প্রকরণ সৃষ্টিতে এটি খুবই গুরত্বপূর্ণ।
জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মায়ােসিসের অবদান
উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে মায়ােসিসের ফলে একটি জনন মাতৃকোষ হতে চারটি জনন কোষের সৃষ্টি হয়, ফলে সৃষ্ট চারটি কোষে ক্রোমােসােম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমােসােম সংখ্যার অর্ধেক হয়। দুটি জননকোষ,তথা পুংজননকোষ ও স্ত্রী জননকোষ একত্রে মিলিত হয়ে একটি জাইগােট সৃষ্টি করে। পরে জাইগােটটি মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে একটি ভ্রণ সৃষ্টি করে, ভ্রূণটি বারবার বিভাজনের মাধ্যমে একটি বহুকোষী জীবের সৃষ্টি করে।
কাজেই মায়ােসিস বিভাজনের মাধ্যমে উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের জননকোষগুলােতে ক্রোমােসােম সংখ্যা কমে জনন মাতৃকোষের অর্ধেক না হলে, জননকোষ দুটির মিলনে সৃষ্ট জীবে ক্রোমােসােম সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে (যেমন- হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ, শৈবাল) দুটি গ্যামিটের মিলনে সৃষ্ট জাইগােটে ক্রোমােসােম সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
যেহেতু ক্রোমােসােমই জীবের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণকারী জিন (gene) বহন করে, সেহেতু সংখ্যা দ্বিগুণ পরবর্তী বংশধর তথা সন্তান সন্তুতির বৈশিষ্ট্য পিতা-মাতা থেকে ভিন্নতর হবে, যা জীবের টিকে থাকার হুমকির সম্মুখীন করতে পারে।
ডিপ্লয়েড জীবে গ্যামিট সৃষ্টিকালে জনন মাতৃকোষে এবং হ্যাপ্লয়েড জীবের জাইগােটে মায়ােসিস হয় বলেই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশ পরম্পরায় টিকে থাকে।জীবদেহে মায়ােসিস কোষ বিভাজনের গুরত্ব :জীব জগতে মায়ােসিসের গুরত্ব অপরিসীম।
কারণ অধিকাংশ জীবের যৌন জনন প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে মায়োসিস কোষ বিভাজন। মায়ােসিসের মাধ্যমে গ্যামিট সৃষ্টি হয়। পুং ও স্ত্রী গ্যামিটের মিলনের ফলে সৃষ্ট ভ্রূণের মাধ্যমে নতুন জীবের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে স্পাের সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়।
জীবদেহে মায়ােসিসের গুরত্ব উলেখ করা হলাে-
১। গ্যামিট বা জনন কোষ সৃষ্টি
মায়ােসিসের কারণে জনন কোষ উৎপন্ন হয় যা যৌন জননে সক্ষম জীবের বংশবৃদ্ধিতে অপরিহার্য।
২। ক্রোমােসােম সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
মায়ােসিসের মাধ্যমে সৃষ্ট গ্যামিটে ক্রোমােসােম সংখ্যা অর্ধেক থাকে যা যৌন জননের সময় মিলিত হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের ক্রোমােসােম সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখে।
৩। প্রজাতির নিজস্বতা বজায় রাখা
ক্রোমােসােম সংখ্যা সঠিক রাখার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে পূর্ববর্তী প্রজন্মের নিজস্বতা বজায় রাখে।
৪। বৈচিত্র্যের সৃষ্টি
মায়ােসিসে ক্রসিংওভারের ফলে জিনের যে আদান প্রদান ঘটে তা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত জীবসমূহে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে।
৫। অভিব্যক্তি (Evolution)
মায়ােসিসের ফলে সৃষ্ট বৈচিত্র্য অভিব্যক্তির ধারা ও প্রবাহের সৃষ্টি করে।
৬। জনুক্রম
যে সকল জীবের জীবনচক্রে জনুক্রম আছে সেখানে মায়ােসিস প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। সত্যিকার অর্থে মায়ােসিস কোষ বিভাজন ছাড়া যৌন জননক্ষম জীবের অভিযোজন এবং টিকে থাকা কল্পনা করা যায় না।