যৌনবাহিত রােগ কী?
যে সব রােগ যৌন মিলনের সময় সংক্রমণের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে সে সব রােগকে যৌনবাহিত রােগ (Sexually Transmitted Disease, STDs) বলে।
চিকিৎসাবিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী, সংক্রমণের ফলে লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে রােগ (disease) বলে।
যেহেতু অনেক সময় যৌনবাহিত রােগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না তাই এ অবস্থাকে যৌনবাহিত রােগ না বলে যৌনবাহিত সংক্রমণ (Sexually transmitted infections) বলে । রােগের লক্ষণ প্রকাশ পাক না পাক সাধারণ মানুরে কাছে এগুলাে যৌনবাহিত রােগ নামেই বহুল পরিচিত। অনেক ধরনের যৌনবাহিত রােগ ও সংক্রমণ রয়েছে। কেবল নিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমেই এসব রােগ ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
নিচে ৩টি যৌনবাহিত রােগ (সিফিলিস, গনােরিয়া ও এইডস) এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলােচনা করা হলাে-
সিফিলিস (Syphilis) রোগ কী?
সিফিলিস একটি যৌনবাহিত রােগ। এ রােগে দেহে দীর্ঘকালীন জটিলতা দেখা দেয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
সিফিলিস রােগের কারণ
Treponema pallidum নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রােগ সংক্রমিত হয়। এ জীবাণুগুলাে গরম ও স্যাতস্যাতে জায়গায় বসবাস করতে পছন্দ করে। ফলে মুখ, পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গকে এরা সহজেই বেছে নেয়।
সিফিলিস রোগের সক্রমন পদ্ধতি
মূলত নারী পুরুষের সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে এ রােগ ছড়ায়। যে কোন ধরনের যৌন মিলনের মাধ্যমে এ রােগে এক দেহ হতে অন্য দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া চুম্বনের মাধ্যমেও এ রােগ সংক্রমিত হতে পারে। রােগীর রক্ত গ্রহণের মাধ্যমেও এ রােগ হয়। আবার গর্ভাবস্থায় মায়ের সিফিলিস থাকলে ভূমিষ্ঠ সন্তান এ রােগে আক্রান্ত হয়।
সিফিলিস রােগের লক্ষণ
- রােগের প্রাথমিক অবস্থায় এক মাসের মধ্যে চামড়ায়- দৃঢ়, ব্যথাবিহীন, চুলকানিবিহীন ক্ষতের সৃষ্টি হয়। একে ক্যাঙ্কার (Canker) বলে। ধীরে ধীরে এটা বড় হয়ে ফোস্কা বা ঘায়ের মতাে হতে থাকে। নারী ও পুরুষ উভয়ের দেহে এ রােগ হতে পারে।
- রােগ শুরুর দুই মাসের মধ্যে চিকিৎসা না নিলে এ ঘা সমগ্র দেহে ছড়াতে থাকে সে সাথে জ্বর ও মাথা ব্যথার মতাে উপসর্গ দেখা দেয় এবং শরীরের বিশেষ করে কুচকির (Groin) গ্রন্থিগুলাে বড় হয়ে যেতে থাকে।
- এ রােগ পায়ুপথ, ঠোট,মুখ, গলনালি, খাদ্যনালি এমনকি শ্বাসনালিতেও ছড়িয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় কেউ যদি চিকিৎসা নিতে অবহেলা করে তবে রােগটি খুবই জটিল আকার ধারণ করে।তবে অনেকের ক্ষেত্রে রােগটি সুপ্ত অবস্থায় চলে যায় এবং বছর দুয়েক সুপ্ত থাকার পর ভয়াবহরূপে দেখা দেয়।
- এভাবে চিকিৎসাহীন থেকে গেলে পুরুষাঙ্গের মাথায় বিশাল আকৃতির বিশ্রী ক্ষত বা ঘা হয়, অবস্থা আরাে জটিল হয়ে এক সময় এ রােগ চোখ, স্নায়ুতন্ত্র , হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে,এমনকি রােগীটিকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
সিফিলিস রোগের চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়েই সিফিলিসের চিকিৎসা করানাে উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেনিসিলিন শ্রেণির ওষুধ সেবন অথবা ইনজেকশন গ্রহণ করলে এ রােগ সম্পূর্ণরূপে ভালাে হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী বা যৌনসঙ্গী উভয়েরই চিকিৎসা নেয়া উচিত অন্যথায় এর সংক্রমণ সঙ্গীর নিকট থেকে আবারও হতে পারে।
সিফিলিস প্রতিরােধ
এ রােগের কোন প্রচলিত টিকা বা ভ্যাক্সিন নেই। অবাধ যৌন মিলন না করে সুস্থ জীবন যাপন ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাই এ রােগ প্রতিরােধের উপায়। রক্ত দেয়া বা নেয়ার সময় যাতে পুরােনাে সুঁই ব্যবহার না করা হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।