- DNA রেপ্লিকেশন কী?
- রেপ্লিকেশনের প্রকারভেদ
- সংরক্ষণশীল রেপ্লিকেশন পদ্ধতি (Conservative)
- অর্ধরক্ষণশীল রেপ্লিকেশন পদ্ধতি (Semiconservative)
- বিচ্ছুরণশীল রেপ্লিকেশন পদ্ধতি (Dispensive)
- DNA অনুলিপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ (Ingredients for replication) :
- DNA রেপ্লিকেশনের বা অনুলিপনের ধাপসমূহ (Steps of DNA replication):
- প্রারম্ভিক দশা (Initiation phase)
- বৃদ্ধি দশা বা শৃঙ্খল দীর্ঘকরণ দশা (Chain elongation phase)
- সমাপ্তিকরণ বা অন্তিম দশা (Termination phase)
DNA রেপ্লিকেশন কী?
যে প্রক্রিয়ায় একটি ডিএনএ ডবল হেলি থেকে একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি ডিএনএ ডবল হেলিক্সের সৃষ্টি হয় তাকে ডিএনএ প্রতিলিপন (Replication) বলে।
রেপ্লিকেশনের সময়
কোষ বিভাজন আরম্ভ হওয়ার পূর্বে ইন্টারফেজ পর্যায়েই ডিএনএ প্রতিলিপন সম্পন্ন হয়।
রেপ্লিকেশনের প্রকারভেদ
ওয়াটসন ও ক্রিক (১৯৫৬) ডিএনএ অণুর প্রতিলিপনের সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে তিনটি অনুকল্প প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলাে হলাে-
সংরক্ষণশীল রেপ্লিকেশন পদ্ধতি (Conservative)
মূল ডিএনএ ডবল হেলিক্সের কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটিয়েই নতুন ডিএনএ ডবল হেলিক্স এর সৃষ্টি হয়।
অর্ধরক্ষণশীল রেপ্লিকেশন পদ্ধতি (Semiconservative)
নব্য সংশ্লেষিত ডবল হেলিক্স এর প্রতিটিতে একটি পুরাতন ও একটি নতুন হেলিক্স থাকে।
বিচ্ছুরণশীল রেপ্লিকেশন পদ্ধতি (Dispensive)
এক্ষেত্রে নতুন সংশ্লেষিত ও পুরাতন সূত্রের খন্ড খন্ড অংশগুলাে এলােমেলােভাবে মিলিত হয়ে নতুন ডবল হেলিক্স তৈরি করে।
Matliew Meselon ও Franklin Stahl(১৯৫৭) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেন যে, ডিএনএ প্রতিলিপন হয় অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতিতে। ডিএনএ প্রতিলিপন কোষ বিভাজনের পূর্ব শর্ত। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ২০ধরনের প্রােটিন এবং বেশ কয়েক ধরনের এনজাইম জড়িত থাকে। এর মধ্যে ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম অত্যাবশ্যকীয়। নিম্নলিখিত ধাপগুলাের মাধ্যমে অতিদ্রুত, অবিচ্ছিন্ন ও নিখুঁতভাবে এ পদ্ধতিটি সম্পন্ন হয়।
নিচে অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতিতে DNA রেপ্লিকেশন বা অনুলিপন বর্ণনা করা হলো-
DNA অনুলিপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ (Ingredients for replication) :
- ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড বা dNTP (চার ধরনের- dATP, dGTP, dCTP ও dTTP)
- হেলিকেজ (Helicase)
- DNA পলিমারেজ-I, II ও III (DNA Poplymerase- I, II ও III)
- প্রাইমেজ (Primase)
- লাইগেজ (Ligase)
- গাইরেজ (Gyrase)
- SSBP or HDP (Single Strand Binding Protein or Helix Destabilizing Protein)
- Mg আয়ন ও
- RNA পলিমারেজ।
DNA রেপ্লিকেশনের বা অনুলিপনের ধাপসমূহ (Steps of DNA replication):
প্রারম্ভিক দশা (Initiation phase)
- DNA অনুলিপন শুরু হওয়ার মুহূর্তে DNA-র হেলিক্সের সূত্র দুটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে খুলতে শুরু করে এবং হেলিক্সের প্যাচ উন্মুক্ত (unwinding of the strands) হতে থাকে। এই স্থানকে রেপ্লিকেশনের উৎস বা রেপ্লিকন বা সূচনা বিন্দু বা ওরি (Origin, সংক্ষেপে– Ori) বলে। (DNA-এর অনুলিপন এক বা একাধিক নির্দিষ্ট স্থানে থেকে শুরু হতে পারে। সাধারণত DNA-এর যেখানে (Adenine = A) এবং (Thymine = T)বেশি থাকে সেখানেই ওরি অবস্থান করে।
- প্রথমে এই স্থানে (ওরি) DNA আনউইন্ডিং প্রোটিন বা SSBP বা HDP যুক্ত হয়।
- প্রতিটি সূত্রের যে স্থানে SSBP বা HDP যুক্ত হয়, সূত্র দুটি সেই স্থানে উন্মুক্ত হয় এবং Y-আকৃতির রেপ্লিকেশন ফর্ক (replication fork) সৃষ্টি করে।এই প্রোটিন যতই সংযুক্ত হতে থাকে DNA ডাবল হেলিক্স ততই উন্মুক্ত হতে থাকে। অনুলিপন এক প্রান্তে শুরু হলে ফর্ক একমুখী আর মধ্যবর্তী স্থানে শুরু হলে ফর্ক দ্বিমুখী হয়। দ্বিমুখী ফর্কযুক্ত স্থানকে অনুলিপন চোখ (replication eye) বলে।
- এরপর DNA-helicase DNA সূত্র দুটির বেসগুলোর মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ড ভেঙে দেয় ফলে সূত্র দুটি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। এই সময় রেপ্লিকেশন ফর্কে Y-আকৃতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
- পরবর্তী পর্যায়ে DNA gyrase ফর্কের ওপরের বেস জোড়াগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে এবং DNA দ্বিসূত্রকের অতি কুণ্ডলীকৃত (super coiling) অংশকে খুলতে সাহায্য করে।
- DNA সূত্র দুটি উন্মুক্ত হলেই RNA প্রাইমার (RNA primer) সৃষ্টি হয় এবং উন্মুক্ত স্থানে যুক্ত হয়। [RNA পলিমারেজ রাইবোনিউক্লিওটাইডগুলোকে (2-100টি) সংযুক্ত করে ছোট RNA খণ্ডক অর্থাৎ RNA প্রাইমার সৃষ্টি করে।
- এরপর DNA পলিমারেজ (DNA Poplymerase) RNA প্রাইমার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উন্মুক্ত DNA টেমপ্লেটে (DNA template) DNA নিউক্লিওটাইডগুলোকে (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড) শৃঙ্খলিত করে আনে।

বৃদ্ধি দশা বা শৃঙ্খল দীর্ঘকরণ দশা (Chain elongation phase)
- RNA প্রাইমার যুক্ত হওয়ার পর প্রাইমারের 3´-OH প্রান্তে DNA পলিমারেজ-III এর প্রভাবে বিভিন্ন ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড পর্যায়ক্রমিকভাবে যুক্ত হতে থাকে এবং নতুন DNA শৃঙ্খল দীর্ঘ হতে থাকে। এই দীর্ঘকরণ প্রক্রিয়া 5’>3´ দিকে চলতে থাকে। মাতৃ DNA-র উন্মুক্তসূত্র দুটি ছাঁচ বা টেমপ্লেটের (template)-এর কাজ করে। যার উপর পরিপূরক DNA সূত্র তৈরি হয়।
- উৎস থেকে অনুলিপন একদিকে বা উভয় দিকে হতে পারে।
- DNA ডাবল হেলিক্সের সূত্র দুটি পরস্পর বিপরীতমুখী হওয়ায় একটি সূত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিওটাইড যুক্ত হতে থাকে, এই সূত্রটিকে অগ্রগামী সূত্র (leading strand) বলে। অপর সূত্রটিতে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড 3´–5′ দিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডকে সংযুক্ত হয়ে ডাবল হেলিক্স গঠন করে বলে এটি ধীরগতি সম্পন্ন হয় এবং DNA সংশ্লেষণও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডকে হতে থাকে। এরূপ ক্ষুদ্র খণ্ডকে ওকাজাকি খণ্ড ( Okazaki fragment) এবং DNA সূত্রটিকে ধীরগতি সূত্র (lagging strand) বলে। প্রতিটি ওকাজাকি খণ্ডের সংশ্লেষণের শুরুতেও RNA প্রাইমার সৃষ্টির প্রয়োজন হয়।
- পরবর্তী ধাপে লাইগেজ (ligase)-এর সাহায্যে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডকগুলো সংযুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ সূত্র গঠন করে।
সমাপ্তিকরণ বা অন্তিম দশা (Termination phase)
- অনুলিপি গঠন প্রক্রিয়া ‘ওরি’ স্থান থেকে শুরু করে চক্রাকারে DNA-র ‘ওরি’ স্থানের একেবারে বিপরীত প্রান্তে এসে পৌছালে অনুলিপি গঠনের সমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ এনজাইমসহ ফর্ক DNA ডাবল হেলিক্সের টারমিনেশন স্থানে পৌছালে, অনুলিপি গঠন সমাপ্ত হয়।
- শেষ পর্যায়ে অনুলিপিত খণ্ডগুলো DNA লাইগেজ দ্বারা যুক্ত হয়ে দুটি অখণ্ড নতুন সূত্র উৎপন্ন হয়। এভাবে একটি পুরাতন DNA অণু থেকে একটি নতুন ও একটি পুরাতন সূত্র সৃষ্টি হয়। এ কারণে একে অর্ধরক্ষণশীল অনুলিপন প্রক্রিয়া বলা হয়।
DNA রেপ্লিকেশনের জৈবিক গুরুত্ব
DNA অণুর রেপ্লিকেশন হওয়ার কারণেই কোষ বিভাজন ঘটে। DNA অণুর রেপ্লিকেশন অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতিতে সংঘটিত হয় বলে প্রজাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যাবলি অপরিবর্তিত অবস্থায় বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়। জীবের প্রয়োজনীয় সকল প্রোটিন DNA থেকে RNA সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লেষিত হয়।