লাইসােসােম
Lysosoe দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত যথা- Lyso = হজমকারী ; Somo = বস্তু।
সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতগুলাে হাইড্রোলাইটিক এনজাইম একটিপাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। এদের লাইসােসােম বলে।
আবিষ্কার
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে দ্য দুবে এদের আবিষ্কার করেন।
অবস্থান
কিছু ছত্রাক, শৈবালসহ অধিকাংশ প্রাণী কোষে লাইসােসােম পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ উদ্ভিদ কোষে লাইসােসােম অনুপস্থিত।
উৎপত্তি
এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে লাইসােমের উৎপত্তি।
লাইসােসােমের প্রকারভেদ
সাধারণত দু’ধরনের লাইসােসােম পাওয়া যায়। যথা-
- ১। ডাইজেসটিভ গহ্বর এবং
- ২।রেসিডিউয়াল বস্তু।

লাইসােসােমের গঠন
লাইসােসােম সাধারণত গােলাকার তবে অসমানও হতে পারে। এদের আকার অনিয়মিত এবং পরিবর্তনশীল। এদের আয়তন সাধারণত ০.২-০.৮ মাইক্রন। প্রতিটি লাইসােসােম লিপােপ্রােটিন নির্মিত আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এর ভেতরে গাঢ়, দানাদার গহ্বরযুক্ত পদার্থ থাকে। এতে টিস্যু বিগলনকারী এনজাইম ছাড়াও প্রায় ৪০ ধরনের এনজাইম থাকে। একেকটি লাইসােসােম একেক ধরনের এনজাইমে সমৃদ্ধ।
লাইসােসােমের কাজ
- ১। ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় আক্রমণকারী জীবাণু ভক্ষণ ।
- ২। তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিলে কোষস্থ উপাদান ও অঙ্গাণুকে বিগলিত করে ধ্বংস করে যাকে অটোফ্যাগি (Autophagy) বলে।
- ৩। পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম থাকায় এরা প্রায় সব ধরনের জৈবিক বস্তু হজম করতে পারে।
- ৪। এরা জীবদেহের অকেজো কোষকে অটোলাইসিস(Autolysis) প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে। ফলে সম্পূর্ণ কোষটিই পরিপাক হয়ে যেতে পারে।
- ৫। বিভিন্ন ধরনের বস্তু নিঃসরণ করে।
লাইসোসোমের বিস্তারিত কাজ
বর্জ্য অপসারণ:
কোষের ভেতরে তৈরি বর্জ্য পদার্থ, অপচয়িত অঙ্গাণু এবং ভেঙ্গে যাওয়া কোষাংশ লাইসোজোমের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। লাইসোজোম ছাড়া কোষের ভেতরে বর্জ্য জমা হতে থাকতো এবং কোষের কার্যকারিতা ব্যাহত হতো।
কোষের পুনর্নবীকরণ:
লাইসোজোম পুরাতন এবং অকার্যকর অঙ্গাণু ভেঙে ফেলে নতুন অঙ্গাণু তৈরির জন্য স্থান করে দেয়। লাইসোজোম ছাড়া কোষের পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতো।
রোগ প্রতিরোধ:
লাইসোজোম কোষে প্রবেশকারী জীবাণু এবং ভাইরাসকে ধ্বংস করে। লাইসোজোম ছাড়া কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতো এবং প্রাণী সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তো।
কোষের মৃত্যু:
কোষের প্রয়োজন না হলে লাইসোজোম কোষের ভেতর থেকে কোষকে ভেঙে ফেলে। লাইসোজোম ছাড়া মৃত কোষ শরীরে জমা হতে থাকতো এবং বিভিন্ন রোগের কারণ হতো।
হজম প্রক্রিয়া:
কিছু প্রাণীকোষে লাইসোজোম খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। লাইসোজোম ছাড়া এই কোষগুলো খাদ্য হজম করতে পারতো না।
লাইসোসোম কে কেন আত্মঘাতী থলিকা বলা হয়?
তীব্র খাদ্যাভাবের সময় এর প্রাচীর ফেটে যায় এবং আবদ্ধকৃত এনজাইম বের হয়ে কোষের অন্য অঙ্গাণুগুলো বিনষ্ট করে দেয়। এই কাজকে বলে স্বগ্রাস বা অটোফ্যাগি। এভাবে পুরো কোষটিও পরিপাক হয়ে যেতে পারে। একে বলা হয় অটোলাইসিস। লাইসোসোম জীবদেহের অকেজো কোষগুলো অটোলাইসিস পদ্ধতিতে ধ্বংস করে বলে লাইসোজোমকে আত্মঘাতী অঙ্গাণু বলা হয়।
লাইসোজোমকে susideal squard বা suicidal bag বলা হয় কেন?
প্রতিকুল পরিবেশে কোন কোন উপবাসী (starving) কোষে রাইবােজাম, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলামের অংশবিশেষ একত্রিত হয়ে পর্দাবেষ্টিত একটি গহ্বর গঠন করে। এ গহ্বর পরে লাইসােজোমের সাথে মিশে একটি অটোফেজিক (autophagic) গহ্বর -এ পরিণত হলে উক্ত বস্তুগুলোসহ কোষটি পরিপাক হয়ে যায়। তাই বিজ্ঞানী ডুভে লাইসােজোমকে কোষের আত্মঘাতি থলিকা (suicidal bag) নামে আখ্যায়িত করেছেন।
লাইসোজোমকে এনজাইম প্যাকেট বলা হয় কেন?
লাইসোজোম প্রধানত ইউক্যারিওটিক প্রাণীকোশে প্রাপ্ত একটি একক পর্দাবৃত কোশীয় অঙ্গাণু। এর ভিতরে প্রায় 50 টি আর্দ্রবিশ্লেষক উৎসেচক (Hydrolytic enzyme ) পাওয়া যায়। এই কারণে লাইসোজোমকে এনজাইম প্যাকেট বলা হয়।