শ্বাসরঞ্জক কী? হিমোগ্লোবিন এর গঠন। শ্বসনে হিমোগ্লোবিন বা শ্বাসরঞ্জকের ভূমিকা।

শ্বাস রঞ্জক কী?

রক্তের যে অংশ দ্বারা শ্বসন গ্যাস, বিশেষ করে O₂ পরিবাহিত হয় তাকে শ্বাসরঞ্জক বলে।

হিমোগ্লোবিন এর গঠন

রক্তের যে অংশ দ্বারা শ্বসন গ্যাস, বিশেষ করে O₂ পরিবাহিত হয় তাকে শ্বাসরঞ্জক বলে। মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় বিদ্যমান লাল বর্ণের প্রোটিনধর্মী ভারী পদার্থ হিমোগ্লোবিন হলো শ্বাসরঞ্জক। হিমোগ্লোবিন এর বর্ণের জন্যই রক্ত লাল দেখায়। প্রতিটি হিমোগ্লোবিন অণু ৫% হিম (heme) নামক লৌহ ধারণকারী পিগমেন্ট এবং ৯৫% গ্লোবিন (globin) নামক পলিপেপটাইড প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত।

এক অণু হিমোগ্লোবিন চারটি হিম একক ও চারটি পেপটাইড শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত। রক্তে হিম ও গ্লোবিনের অনুপাত ১:২৫। হিমের ৩৩.৩৩% লৌহ (Fe)। হিমোগ্লোবিনের রাসায়নিক সংকেত হলো- (C712H11300245N214S2Fe)4 এর আণবিক ওজন ৬৪,৪৫০ ডাল্টন। পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমগ্র রক্তে মাত্র ৩ গ্রাম লৌহ থাকে। হিমোগ্লোবিনোমিটার (haemoglobinometer) যন্ত্রের সাহায্যে হিমোগ্লোবিন পরিমাপ করা হয়।

শ্বাসরঞ্জক কী? হিমোগ্লোবিন এর গঠন। শ্বসনে হিমোগ্লোবিন বা শ্বাসরঞ্জকের ভূমিকা।

শ্বসনে হিমোগ্লোবিন বা শ্বাসরঞ্জকের ভূমিকা

হিমোগ্লোবিন শ্বসন গ্যাস O₂ পরিবহনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। হিমোগ্লোবিন শসনের জন্য ফুসফুস থেকে অক্সিজেন দেহের প্রতিটি কোষে এবং শ্বসনে সৃষ্ট কিছু কার্বন ডাইঅক্সাইড কোষ থেকে ফুসফুসে পরিবহন করে।

অক্সিজেন পরিবহনে হিমোগ্লোবিন বা শ্বাসরঞ্জকের ভূমিকা

প্রশ্বাসের সময় O₂ ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ফুসফুসের অ্যালভিওলাসের চারপাশে অবস্থিত রক্তজালিকার রক্তের প্লাজমায় আসে। প্লাজমা থেকে প্রায় ৯৮% O₂ হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে অস্থায়ী যৌগ অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে দেহকোষে পরিবাহিত হয়। দেহকোষের চারপাশে যেহেতু অক্সিজেনের পরিমাণ কম তাই অক্সিহিমোগ্লোবিন ভেঙে অক্সিজেন মুক্ত হয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষে প্রবেশ করে।

কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহনে হিমোগ্লোবিন বা শ্বাসরঞ্জকের ভূমিকা

শ্বসনে সৃষ্ট কিছু CO₂ (১০%) লোহিত কণিকার মধ্যে যে হিমোগ্লোবিন থাকে তার প্রোটিন (গ্লোবিন) অংশের অ্যামিনো গ্রুপের (-NH2) সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বামিনো হিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে রক্ত দ্বারা পরিবাহিত হয়। কার্বামিনো হিমোগ্লোবিন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ কর্তৃক হৃৎপিণ্ড হয়ে পরিশোধনের জন্য ফুসফুসে গমন করে। ফুসফুসে আসার পর বিপরীতমুখী পরিবর্তন দ্বারা কার্বন ডাইঅক্সাইড মুক্ত হয়।
এই রাসায়নিক বিক্রিয়া এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে (০.০১ সেকেন্ডের কম) অতি দ্রুত সম্পন্ন হয়।

Leave a Comment