সহজাত আচরণ কী? সহজাত আচরণের বৈশিষ্ট্য।

সহজাত আচরণ

একটি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রাণী কোন রকম শিক্ষা বা পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই জৈবিক প্রয়ােজন মেটাতে বা আত্মরক্ষার তাগিদে বংশ পরম্পরায় একইভাবে যেসব জন্মগত অপরিবর্তনীয় আচরণ প্রদর্শন করে তাকে সহজাত আচরণ বলে।

সহজাত আচরণের বৈশিষ্ট্য

  • ১। সহজাত আচরণ বংশগত এবং জিন নিয়ন্ত্রিত। তাই প্রতিটি প্রজাতির জন্য এ আচরণ সুনির্দিষ্ট।
  • ২। সহজাত আচরণ শেখার মাধ্যমে বা পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না।
  • ৩। সহজাত আচরণ জন্মগত হলেও, প্রতিটি সহজাত আচরণ জন্মের সময় থেকে আত্মপ্রকাশ করে না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে উপযুক্ত সময়ে তাদের বিকাশ ঘটে। যেমন- শিশুর স্তনপানের প্রবৃত্তি জন্মের সময় থেকে প্রকাশিত হলেও যুগলবন্দী বা মৈথুন প্রবৃত্তি জন্মের পরপরই আত্মপ্রকাশ করে না।
  • ৪। সহজাত আচরণ একটি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই দেখা যায় এবং তা বংশ পরম্পরায় একইভাবে আত্মপ্রকাশ করে। বাবুই পাখি অতীতে যেভাবে বাসা তৈরি করেছে, আজও তা সেভাবেই বাসা বেঁধে চলেছে।
  • ৫। সহজাত আচরণ প্রাণীর কোন না কোন উদ্দেশ্যের সাধন করে, যদিও উদ্দেশ্যর ফলাফল সম্পর্কে প্রাণীর কোন পূর্ব ধারণা থাকে না।
  • ৬। সহজাত আচরণ প্রাণীর জৈবিক প্রয়ােজন মিটায় এবং আত্মরক্ষা, বংশ রক্ষা বা অন্যান্য কাজে সহায়তা দান করে।
  • ৭। সহজাত আচরণের একটি নির্দিষ্ট পরম্পরা আছে। যেমন, ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্রের লােনা পানি থেকে নদীর স্বাদু পানিতে চলে আসে। আবার ডিম হতে পােনা হওয়ার পর এরা পুনরায় সমুদ্রে যাত্রা করে।

সহজাত আচরণের উদাহরণ

ট্যাক্সিস, প্রতিবর্তি ক্রিয়া, স্বভাবজাত আচরণ

সহজাত আচরণ কী? সহজাত আচরণের বৈশিষ্ট্য।

সহজাত আচরণের প্রকারভেদ

প্রাণীকূলের মাঝে বিভিন্ন রকমের সহজাত আচরণ পরিলক্ষিত হয়, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলাে-

১। বিগ্রহ আচরণ

বিভিন্ন প্রজাতির মাঝে প্রজনন ঋতুতে জনন ক্ষেত্র নির্বাচনের সময় বিগ্রহ সৃষ্টি হতে দেখা যায়। গায়ক পাখি, তিন কাঁটা স্টিকল ব্যাক, এন্টিলােপ প্রভৃতি প্রাণীর প্রসঙ্গ এখানে উল্লেখ করা যায়।

২। যুগলবন্দী ও মৈথুন আচরণ

এরূপ আচরণে যৌন মিলনের প্রথম পর্বে স্ত্রী ও পুরুষ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিভিন্ন ভাবে তাদের সঙ্গীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। অনেক পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য মৈথুন ডাক এর আশ্রয় নেয়। বসন্তকালে কোকিলের কুহু ডাক, রাতের বেলায় ঝিঁঝি পােকার ডাক ইত্যাদি দূরবর্তী সঙ্গীকে আকর্ষণ করার ফন্দি।

৩। বাৎসল্য আচরণ

সন্তান জন্মানাের আগে বা পরে বাচ্চার যত্ন বা লালন পালনের জন্য পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ই যে আচরণ প্রদর্শন করে সেটাই বাৎসল্য আচরণ। মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এই আচরণ প্রদর্শণ করে।

যেমন- অধিকাংশ পাখির ক্ষেত্রে বাৎসল্য আচরণকে নিম্নলিখিত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়ঃ

ক) বাসা তৈরি,

খ) ডিমে তা দেওয়া,

গ) ছানার প্রতি যত্নবান হওয়া।

৪। অভিপ্রয়ান আচরণ

মাছ এবং পাখির ক্ষেত্রে অভিপ্রয়ান স্বভাব অতি স্পষ্ট ভাবে লক্ষ করা যায়। যেমন- ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র হতে বহু দূর পথ অতিক্রম করে নদীর স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়ান ঘটায়। আবার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে শীতকালে বাংলাদেশে অভিপ্রয়ান করে এবং শীতের শেষে সাইবেরিয়াতে ফিরে যায় ।

৫। খাদ্য অন্বেষণ আচরণ

পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এ ধরনের আচরণ বেশী দেখা যায়। কোন একটি প্রাণী সব ধরনের খাদ্য খায় না বরং খাওয়ার ব্যাপারে প্রতিটি প্রাণীর একটি নির্দিষ্ট পছন্দ থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রত্যক্ষ করেছেন। একই পরিবেশে বসবাস করা সত্ত্বেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত অনেক প্রজাতির খাদ্য ভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে।

৬। পলায়ন প্রবৃত্তি

শিকারী প্রাণীর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অনেক জীবের মধ্যে পলায়ন প্রবৃত্তি দেখা যায়। যেমন বাজপাখিকে দেখামাত্র কাঠঠোকরা পাখি গাছের মধ্যে আত্মগােপন করে এবং বাজপাখি সরে না যাওয়া পর্যন্ত নিশ্চুপ অবস্থায় থাকে। আবার কিছু কিছু প্রাণী (যেমন- অক্টোপাস) বর্ণের পরিবর্তন ঘটিয়ে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে।

৭। নিদ্রামগ্ন আচরণ

প্রতিকূল আবহাওয়ার হাত থেকে বাঁচার তাগিদে কোন কোন প্রাণী নিষ্ক্রিয় অবস্থার ভেতর দিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করে। যেমন অত্যধিক শীত হতে বাঁচার জন্য ব্যাঙ শীতনিদ্রায় গমন করে।

৮। সঞ্চয় স্বভাব

অনেক প্রাণী বিশেষ করে কীট পতঙ্গ (পিঁপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি) ও ইঁদুর তাদের আবাসস্থলের সীমানায় বা অন্য কোন নিরাপদ স্থানে খাদ্য মজুত করে রাখে।

সহজাত আচরণের উদাহরণঃ ট্যাক্সিস, প্রতিবর্তি ক্রিয়া, স্বভাবজাত আচরণ

Leave a Comment