প্রতিবর্তি ক্রিয়া (Reflex action) কী? প্রতিবর্তি ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য,কৌশল ও প্রকারভেদ।

প্রতিবর্তি ক্রিয়া (Reflex action)

কোন আকস্মিক উদ্দীপনায় এক বিশেষ ধরনের স্বয়ংক্রিয় ও অনৈচ্ছিক আচরণকে প্রতিবর্তি ক্রিয়া বলে।

জীবনের অবস্থার সাথে মােকাবেলা করার জন্য প্রাণী বিচার বিবেচনা না করে বহিঃউদ্দীপকের ক্রিয়ার ফলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ ধরনের ক্রিয়া মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে স্নায়ুতন্ত্রের সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal cord) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

যেমন- গরম কিছু হাতে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে হাত সরে আসা, চোখে কিছু পড়লে আপনা থেকেই চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া,পায়ে কাঁটা ফুটলে অতি ক্ষিপ্রতার সাথে পা সরিয়ে নেয়া ইত্যাদি।

প্রতিবর্তি ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য

  • ১) এটি সম্পূর্ণ অনৈচ্ছিক ধরনের প্রতিক্রিয়া, এর পেছনে কোন পূর্ব পরিবল্পনা থাকে না।
  • ২) এটি সহজে সংশােধিত বা পরিবর্তিত হয় না;
  • ৩) এক ধরনের উদ্দীপক এক ধরনের প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে।
  • ৪) প্রতিবর্তি ক্রিয়া সহজাত বা জন্মগত, শিক্ষালব্ধ নয়। এটি সহজ প্রকৃতির।
  • ৫) প্রতিবর্তি ক্রিয়া খুব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়; সংবেদনের সাথে সাথেই দৈহিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

প্রতিবর্তি ক্রিয়ার কৌশল

গরম জিনিস হঠাৎ আঙ্গুলে লাগামাত্র আমরা হাত সরিয়ে নেই। কারণ- গরম জিনিস আঙ্গুলে লাগামাত্র সেখানকার ত্বকে অবস্থিত সংবেদী স্নায়ুর ডেনড্রাইট জ্বালা যন্ত্রণার উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এখানে আঙ্গুলের ত্বক সংগ্রাহক অঙ্গের কাজ করে। আঙ্গুলের ত্বক থেকে উদ্দীপনা সংবেদী স্নায়ুর মাধ্যমে মেরুরজ্জ্বর গ্রে-ম্যাটার অবস্থিত সংবেদী স্নায়ুর অ্যাক্সন ও সংযােজক স্নায়ুর ডেনড্রাইটের মধ্যবর্তী সিন্যাপস এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ রাসায়নিক শক্তিরূপে কর্মোদ্দীপনা মোটর স্নায়ুতে প্রবেশ করে এবং এর অ্যাক্সন কর্তৃক পরিবর্তিত হয়ে আঙ্গুলের পেশিতে পৌছায়। ফলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পেশি সংকুচিত হয় এবং সম্পূর্ণ অনৈচ্ছিকভাবে হাত সয়ে যায়।

প্রতিবর্তি ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য,কৌশল ও প্রকারভেদ।

প্রতিবর্তি ক্রিয়া সংঘটন প্রক্রিয়া

যে পথে প্রতিবর্তি ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকে প্রতিবর্তি চক্র বলে। প্রতিবর্তি চক্রের নিম্নলিখিত অংশগুলাে থাকে- সংগ্রাহক ও এটি প্রতিবর্তি ক্রিয়ার জন্য উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এর সাথে একটি সংবেদী স্নায়ু সংযুক্ত থাকে। সংবেদী স্নায়ু ও উদ্দীপকের মাধ্যমে এর ডেনড্রাইট উদ্দীপ্ত হলে সে তাড়না মেরুরজ্জুতে পরিবাহিত হয়। সংযােজক স্নায়ু ও মেরুরজ্জ্বর গ্রে-ম্যাটার অংশে সংবেদী স্নায়ু ও ক্রিয়াজ স্নায়ুর মধ্যবর্তী স্থানে সংযােজক স্নায়ু অবস্থিত।

মোটর স্নায়ু ও এর মাধ্যমে উদ্দীপনা কার্যকারক অঙ্গে (পেশি বা গ্রন্থি) পৌছায়। কার্যকারক ও পেশি বা গ্রন্থি যেখানে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়।

প্রতিবর্তি ক্রিয়ার প্রকারভেদঃ প্রতিবর্তি ক্রিয়া মূলতঃ তিন ধরনের। যথা-

নিরপেক্ষ প্রতিবর্তিক্রিয়া

বাহ্য উদ্দীপক প্রয়ােগের সাথে সাথে প্রাণীদেহের স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে প্রতিক্রিয়া হয়।যেমন- হঠাৎ উজ্জ্বল আলােতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া।

সাপেক্ষ প্রতিবর্তিক্রিয়া

শিখন বা অনুশীলন সাপেক্ষে বিকল্প উদ্দীপকের প্রতি প্রাণীর মূল উদ্দীপকের ন্যায় প্রতিক্রিয়া।

উদাহরণ- প্যাভলভের পরীক্ষায় এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

ক্রমিক প্রতিবর্তিক্রিয়া

একাধিক প্রতিবর্তি ক্রিয়া সমষ্টিগতভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। যেমন- ঝাঁঝালাে বস্তুর গন্ধে হাঁচি আসা,হাঁচির ফলে চোখে পানি আসা। এগুলাে একটি উদ্দীপকের ক্রমিক প্রতিক্রিয়া।

মানুষের কয়েকটি প্রতিবর্তি ক্রিয়া

চোখের উপযােজন, হাঁটুর ঝাকুনি, চোখের পিউপিলের সঞ্চালন, হাঁচি, কনুই ঝাকুনি, হাই তােলা ইত্যাদি।

Leave a Comment