ধুমপানজনীত শ্বসনজটিলতা। শ্বসনতন্ত্রের উপর ধুমপানের প্রভাব।

ধুমপানজনীত শ্বসনজটিলতা।ধুমপানের প্রভাব।

ধুমপান হচ্ছে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোঁয়া শরীরে গ্রহণ প্রক্রিয়া। ধুমপায়ী যে অবস্থায় জলন্ত সিগারেট বা বিড়ি থেকে উদ্ভূত ধোঁয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে টেনে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করায় তাকে সক্রিয় ধুমপান বলে।

অপরদিকে ধুমপানের সময় ধোঁয়ার যে অংশ চারপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনৈচ্ছিকভাবে মানুষের দেহে নিশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে তাকে নিষ্ক্রিয় ধুমপান বলে। ধুমপানে সৃষ্ট ধােয়াতে প্রায় ৫০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তাদের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদানগুলাে হলাে-নিকোটিন, টার ও কার্বন মনােঅক্সাইড। এগুলাে সাধারণত মানুষের শ্বসন অঙ্গে জটিলতাসহ অন্যান্য রােগ সৃষ্টি করে।

শ্বসনতন্ত্রের উপর ধুমপানের প্রভাব

  • ১। সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় বিদ্যমান বিষাক্ত নিকোটিন ও টার ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করে; কার্বন মনােক্সাইড শ্বাসনালীতে ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি করে।
  • ২। ধুমপানের ধোঁয়া ফুসফুসের অ্যালভিওলাসের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং আয়তন বেড়ে যায়।
  • ৩। ধােয়ার প্রভাবে অ্যালভিওলাসের প্রাচীর ফেটে গিয়ে ফুসফুসে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করে ফলে শ্বসনতল কমে গিয়ে গ্যাস বিনিময়ে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে এ অবস্থাকে এমফাইসিমা বলে।
  • ৪। কার্বন মনােক্সাইড এর বৃদ্ধি ঘটে এবং রক্তের 02 পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস করে। ধমনি গাত্রে কোলেস্টেরল জমতে সাহায্য করে। এতে উচ্চ রক্তচাপ হয়।
  • ৫। ধুমপান এর ফলে গলবিল ও অন্ননালীতে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। মুখ, গলা ও খাদ্যনালীতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ধুমপায়ীদের অধুমপায়ীর চেয়ে ৫-১০ গুণ বেশী।
  • ৬। ধুমপায়ী মহিলাদের বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ৭। ধুমপান পরিবেশ দূষণ ঘটায় এবং অধুমপায়ীদের শ্বাস গ্রহণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
ধুমপানজনীত শ্বসনজটিলতা। শ্বসনতন্ত্রের উপর ধুমপানের প্রভাব।

প্রতিকার (Prevention)

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে প্রচলিত ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ৪ ধারা অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধুমপানের ফলে জরিমানা হিসেবে প্রথমবার অনধিক ৩০০/- (তিনশত) টাকা এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী প্রতিবারের জন্য দ্বিগুণ টাকা দিতে হয়।

এছাড়া ১০ ধারা অনুযায়ী সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি তামাকজাতীয় দ্রব্যের মােড়কে “ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” কিংবা “ধুমপান হৃদরােগের কারণ” লেখা বাধ্যতামূলক।বিশ্বে আনুমানিক ১২৫ কোটি লােক ধুমপায়ী।

এসকল লােক ধুমপান ছাড়তে চাইলেও শেষমেষ ব্যর্থ হয়। কারণ তাদের মানসিক দৃঢ়তার অভাব। এছাড়াও ধুমপান তাদের আসক্তিতে পরিণত হয়। তারপরও ধুমপান প্রতিকারের কয়েকটি উপায় দেয়া হলাে-

  • ১। পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে উৎসাহ পেলে এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হলে ধুমপান থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • ২। মনকে শান্ত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার পদ্ধতিকে অনেক বিশেষজ্ঞই শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
  • ৩। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের নিকোটিন ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
  • ৪। আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকলে ধুমপান পরিত্যাগ করা কোন কঠিন বিষয় নয়। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার যথেষ্ট সামর্থ নিজের থাকতে হবে।

Leave a Comment